ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়ছেে

fec-image

মায়ের ভাষায় শিক্ষা, এটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের অনেকদিনের দাবি হলেও নানা সমস্যার কারণে এখনও তারা এ সুবিধা পুরোপুরি পাচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা তিনটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিকে বই বিতরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের সংকট, পাঠ্যবই স্বল্পতা এবং পাঠদানের সময়সূচি সম্পর্কে কোনো সঠিক নির্দেশনা না থাকায় মাতৃভাষায় সরকারের শিক্ষা কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়েছে।

তবে সাংগঠনিক উদ্যোগে প্রধান তিন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা শিশুদের নিজস্ব মাতৃভাষার বর্ণমালায় কেয়াং বা মন্দির ভিত্তিক প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি অঞ্চলে বাস করেন অন্তত ৩০ লাখ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের সমীক্ষার অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪১টি ভাষা রয়েছে তার মধ্যে ৩৪টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা। এরমধ্যে হাতে গোনা কয়েকটির লিখিত রূপ আছে। কিন্তু সেই বর্ণমালায় শিক্ষার সুযোগ তেমন না থাকায় তাদের নিজস্ব ভাষাগুলো মৌখিকভাবে চর্চা হলেও এর লিখিতরূপ হারাতে বসেছে। এসব সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশই নিজেদের এই বর্ণমালার সাথে পরিচিত নয়।

২০১৭ সাল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিকে মাতৃভাষায় পড়াশোনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা তিনটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিকে বই বিতরণ শুরু করা হয়। কিন্তু শিক্ষকের সংকট, পাঠ্যবই স্বল্পতা এবং পাঠদানের সময়সূচি সম্পর্কে কোনো সঠিক নির্দেশনা না থাকায় পাঠদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে অভিযোগ শিক্ষকদের। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার অধিকারের বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির পর ২০১২ সালে চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, মান্দি, ত্রিপুরা ও ওঁরাও ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের একটি উদ্যোগ নেয়া হয় সরকারিভাবে । চাকমাদের জন্য চাঙমা বর্ণমালা, মারমাদের জন্য মারমা, ত্রিপুরা ও মান্দিদের জন্য পরিবর্তিত রোমান এবং মুন্ডা-ওঁরাওসহ সাদ্রীভাষী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জন্য বাংলা হরফ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৭ সাল হতে প্রথম পর্যায়ে এ পাঁচটি মাতৃভাষায় পাঠদানের বই বিতরণ করা হলেও ওই ভাষার শিক্ষক বা প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাকার্যক্রম পুরোপুরি কাজে আসছে না। ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে -এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ মারমা উন্নয়ন সংসদের কেন্দ্রিয় সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মংপ্রু চৌধুরি বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাকার্যক্রমের আশানুরুপ কোন অগ্রগতি নেই। সাংগঠনিক উদ্যোগে নিজস্ব বর্ণমালায় বই ছাপিয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় গ্রামের বৌদ্ধ মন্দির, কেয়াং প্রভৃতি ধর্মীয় উপাসনালয়ে শিশুদের প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারে। কারণ তিন পার্বত্য জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ তাদের উপর ন্যস্ত। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় নয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন