খাগড়াছড়িতে পর্যটক অপহরণ : নেপথ্যে ছাত্রলীগ নেতা
খাগড়াছড়িতে দুই পর্যটক ও তাদের গাড়ি চালককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার ঘটনায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাদের নাম এসেছে।
তারা হলেন, রাঙামাটি কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদ, রাঙামাটি জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সালাম ও রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব অলি আহাদ।
অপহরণের পর অর্থ লেনদেন নিয়ে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের ইউসিবি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদের নাম আসে। তার সূত্র ধরে উঠে আসে অপর ছাত্রদলের দুই নেতার নাম। অপহরণের শিকার ফরিদপুরের যুবলীগ নেতা এস এম নাহিদুজ্জমামান ছবি দেখে দুই ছাত্রদল নেতাকে শনাক্ত করেছেন।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সাজেক থেকে ফেরার পথে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার জামতলী এলাকায় পর্যটক এসএম নাহিদ উজ্জমামান (৩৮), মামুন ফকির (৩৮) ও গাড়ি চালক জোবায়ের আলম (২৮) অপহৃত হন।
অপহৃতরা সকলেই ফরিদপুর জেলার থানা-নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। সকাল ৭টার দিকে তারা একটি প্রাইভেট করে ফেরা পথে সকাল ৯টার দিকে অপহৃত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে অপহরণকারীরা দুপুর দেড়টার দিকে অপহৃতদের ছেড়ে দেয়।
এই ঘটনায় দীঘিনালা থানা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগী এসএম নাহিদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ৮ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে সাজেক থেকে ফেরার পথে দীঘিনালার জামতলী এলাকায় পৌঁছালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কিছু অচেনা ব্যক্তি পর্যটকদের ব্যক্তিগত গাড়ি গতিরোধ করে। পরে রাস্তা থেকে একটু ভেতরে পার্শ্ববর্তী করাত কলের পাশে নিয়ে মোবাইল, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ফেলে।
এস এম নাহিদ উজ্জমামান জানান, মারধরের এক পর্যায়ে তারা পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা অপহরণকারীদের হাতে দেয়। কিন্তু অপহরণকারীরা ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করে। প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। এতো টাকা দিতে অসম্মতি জানালে অন্তত ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেয়। অপহরণকারীদের দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) চন্দনাইশ শাখার ও ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদের নামে।
রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদের ছোট ভাই আহমেদ ইশতিয়াক আজাদ বলেন, রাঙামাটি জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সালাম ও রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব অলি আহাদ-এর সাথে আমাদের দীর্ঘ দিনের পারিবারিক সম্পর্ক। এরা সম্প্রতি সাজেক বেড়াতে গিয়েছিলেন। পাহাড়ে সহিংসতার জেরে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের কারণে আটকা পড়ে। মাঝখানে একবার কথা হয়েছিল। বলেছিল স্বাভাবিক হলে ফিরবে। কিন্তু এর পর আর কথা হয়নি। এখন কোথায় আছে জানি না।
একটি অনলাইন টকশোতে ছবি দেখালে ফরিদপুরের এস এম নাহিদুজ্জামান বলেন, দুই ছাত্রদল নেতাকে শনাক্ত করে বলেন, অলি আহাদ আমাদেরকে খুব টর্চার করেছে। তবে আব্দুস সালাম অনেকটা নীরব ছিলেন। অলি আহাদ আমার মোবাইলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার টাইপ করে আমার রিলেটিভকে পাঠিয়েছে। এস এম নাহিদুজ্জামান
তিনি আরো জানান, তিনি এক সময় ফরিদপুরে যুবলীগের রাজনীতি করতেন। গত ৫ বছর ধরে তিনি কোন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেই। ফরিদপুরের আমাদের পাট ও পেট্রোল পাম্পসহ অনেক ব্যবসা রয়েছে।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া বলেছেন, মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মূল ঘটনার জানার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তারপর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ, ছাত্রল নেতা অলি আহাদ ও আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মোবাইল বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ঘটনা জানি না। খোঁজ খবর নিয়ে জানাবো।