ফলোআপ........

খাগড়াছড়িতে গেট চাপা পড়ে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিচার হবে তো?

fec-image

খাগড়াছড়িতে বিদ্যালয়ে গেট চাপা পড়ে শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান নিহতের ঘটনার উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউই দায় নিতে চাচ্ছে না ।বরং দায় এড়াতে তৎপর সব পক্ষই। তাছাড়া পক্ষগুলো সকলেই প্রভাবশালী হওয়ায় শ্রাবণ দেওয়ান নিহতের ঘটনার বিচার আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত ১০ আগস্ট সকাল ৯টা। প্রতিদিনের মতো খবং পুড়িয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান তার মা বাসনা চাকমার হাত ধরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছিল। এ সময় বিদ্যালয়ের গেইটটি তাদের উপর পড়ে। মা বাসনা বেঁচে গেলেও ছেলে শ্রাবণ দেওয়ান ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। শ্রাবণ দেওয়ান জেলা সদরের নারায়ন খাইয়া পাড়ার প্রণয় দেওয়ানের ছেলে। জানা গেছে, শিশু শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির প্ররোচণায় লাশের ময়না তদন্ত করেননি পরিবার। শুধু তাই নয়, তদন্ত প্রতিবেদন নিজেদের অনুকূলে নিতে এখনো তৎপর রয়েছে মহলটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তাৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম খবং পুড়িয়া সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের গেটসহ বাউন্ডারি ওয়াল নির্মিত হয়। এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাউন্ডারি ওয়ালসহ গেটেরে কাজ বাস্তবায়ন করেন।
এ বিষয়ে এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, তিনি কাজ শেষ করে প্রায় এক বছর আগে এলজিইডিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কাজের গুণগত মান নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিল না। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে কোন সমস্যা হলে চিঠি দিয়ে জানানোর নিয়ম রয়েছে। চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত সে সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জানানো হয়নি।

খাগড়াছড়ি সদর এলজিইডি উপ-সহকারী প্রকৌশলী সরোজ চৌধুরী জানান, নির্মাণ কাজে কোন ক্রটি ছিল না। প্রাথমিক তদন্তেও তা প্রমাণিত হয়েছে। সরোজ চৌধুরী এ অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেন, কয়েক মাস আগে স্কুলে শিক্ষা সামগ্রী ঢুকানোর সময় ট্রাক ধাক্কায় গেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দুর্ঘটনায় জানা গেছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি না জানিয়ে গাছের খুটির সাহায্যে গেটটি আটকে রেখেছিল।

স্কুলের পাশে অবিস্থিত পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই গোবিন্দ চন্দ্র রায় জানান, স্কুলের গেটটি দীর্ঘ দিন ধরে একটি গাছের খুটি দিয়ে আটকানো ছিল। কিন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার পৌর কমিশনার অতীশ চাকমা বলেন, দুর্ঘটনায় দায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার এড়াতে পারে না। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে সোমবার (১৫ আগস্ট) খবং পুড়িয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জিনু চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের গেটের ক্রটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন এ ঘটনার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটিকে দায়ী করে বলেন, উপরে চকচক করলেও কাজের মান ভাল হয়নি। ট্রাকের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত গেটটি কাঠের খুটি দিয়ে আটকানো ছিল। এ বিষয়টি তাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানাননি।

এদিকে বিদ্যালয়ে গেট চাপা পড়ে শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ান নিহতের ঘটনার দায় এড়াতে শুরু থেকে দৌড়ঝাপ চলছে। এমন কি মামলায় না যেতে শ্রাবণ দেওয়ানের পরিবারকে মোটা অঙ্কের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থী শ্রাবণ দেওয়ানের পরিবার আদৌ বিচার পাবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, শ্রাবণ দেওয়ানের পরিবার লাশের ময়না তদন্ত করেনি। কাজেই পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার সুযোগ নেই। তাছাড়া পরিবার মামলা করবে না মর্মে লিখিত দিয়ে গেছে। তবে তদন্ত সংস্থা কাউকে দায়ী করে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন দিলে আইনগত সুযোগ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, গেট চাপা পড়ে, শিক্ষার্থী নিহত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন