গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার


২০০৫ সাল থেকে সকল সরকার বাংলাদেশের ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলে আখ্যা না দেয়ার জন্য একের পর এক প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা জারি করলেও বর্তমান সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করেছে। কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ আজ শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া এ প্রতিবেদনে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার দেখা গিয়েছে।
যদিও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় টিভি-২ শাখা ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রচারিত এক প্রজ্ঞাপনে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায়/গোষ্ঠীকে উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃ-গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বর্ণিতাবস্থায়, ০৯ আগস্ট ২০২২ তারিখ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত টকশো-তে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
এ ধরনের আরো অনেক সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকার পরও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে বিভিন্নস্থানে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। এ রিপোর্টের ২১.১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
“আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সমসুযোগ সৃষ্টি সম্পর্কিত সুপারিশ
গণমাধ্যমে এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে:
১. গণমাধ্যম নীতিমালায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের বিষয় অন্তর্ভুক্তি;
২. গণমাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম সম্প্রচার সময়সীমা নির্ধারণ;
৩. আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রকাশ/প্রচাররত গণমাধ্যমে আদিবাসী ভাষায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান পরিবেশনকে অগ্রাধিকার দেওয়া;
৪. আদিবাসীদের নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে যেসব মাধ্যম গড়ে উঠেছে, তাদের নিবন্ধন সহজতর করা; এছাড়া আদিবাসীদের নিজস্ব গণমাধ্যম যেন আরও গড়ে উঠতে পারে, তার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া;
৫. মূলধারার গণমাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপস্থাপন যথাযথ ও উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য গণমাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যথাযথ উপস্থাপনের জন্য নির্দেশিকা প্রস্তুত করা;
৬. সাংবাদিকতা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ‘আদিবাসী বিষয়’ (Indegenous Studies) অন্তর্ভুক্ত করা;
৭. আদিবাসী সাংবাদিক/সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের জন্য ফেলোশিপ দেওয়া ও নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান সিনিয়র সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, ’আমরা কমিটির সবাই আলাপ আলোচনা করেই আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগের প্রজ্ঞাপনগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের করা। আমরা সেটা গ্রহণ করিনি। আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক যেসব আইনে বাংলাদেশ পার্টিনেন্ট হয়েছে সেগুলো অনুসারেই আমরা তাদের আদিবাসী বলেছি আলাপ-আলোচনা করেই।’
কিন্তু আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ তো সাক্ষর করেনি- এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল আহমেদ বলেন, ‘যেগুলো করেছে সেগুলো অনুসারেই আমরা আদিবাসী বলতে পারি।’
আদিবাসী বিষয়ক কোন আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশ সাক্ষর করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তিনি একটি ইফতার পার্টিতে আছেন পরে এ বিষয়ে জানাবেন।’