নাইক্ষ্যংছড়িতে মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষক সংঘাত: অধ্যক্ষসহ আহত ৩

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম আলীম মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি সুরাহা না হওয়ায় এবার সংঘাতে লিপ্ত হলো ছাত্র-শিক্ষকরা। ত্রিমুখী সংঘাতে আহত হয়েছে কলেজ অধ্যাক্ষসহ ৩জন।

শনিবার (১৪সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের বিছারমারাস্থল মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর অবরুদ্ধ থাকা ও হামলার শিকার ১১ শিক্ষককে পুলিশী সহায়তায় উদ্ধার করেন ইউএনও। পরে ঘটনা তদন্তে পাচঁ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে- শনিবার মাদ্রাসার প্রথম ঘন্টার ক্লাস শেষ হওয়ার পর মাদ্রাসার ১১জন শিক্ষক একত্রিত ভাবে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে দুদুকের সততা স্টোর অর্থ বিতরণ নিয়ে অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান। তাদের কথাবার্তার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এসময় অধ্যক্ষ রুম থেকে বাইরে আসলে কয়েকজন ছাত্রের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাদ্রাসার সহকারী সুপারসহ অন্তত ১১জন শিক্ষককে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুটতে থাকে উত্তেজিত ছাত্ররা।

খবর পেয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে মাদ্রাসা মিলনায়তন থেকে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করে গাড়িতে উঠানো হলে সেখানেও দ্বিতীয় দফায় কয়েকজন ছাত্র ও বহিরাগতরা পুলিশের গাড়িতে থাকা শিক্ষকদের উপর হামলার জন্য তেড়ে যান। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই শিক্ষকদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

এদিকে ঘটনায় আহত অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা আবু বক্কর বলেন- সম্প্রতি অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেন নিজের অনিয়ম দুর্নীতি ঢাকতে এবং প্রতিবাদী শিক্ষকদের কোনঠাসা করার লক্ষ্যে মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ ইছহাকের বিরুদ্ধে দুদকে মিথ্যা অভিযোগ এবং অপর একটি অভিযোগ করে আরও ৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি অধ্যক্ষের কাছে জানতে গেলে ছোট ছোট ছাত্রদের ডেকে উত্তেজিত করে ঘটনাটি সংঘাতে পরিণত করেন। এসময় ইট পাটকেলে মাদ্রাসার শিক্ষক ইছহাক, মোক্তারসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয় বলে দাবি করেন তিনি।

সরেজমিনে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদ্রাসার আলীম ২য় বর্ষের ছাত্র শিবলী, নবম শ্রেণীর ছাত্র সাইফুলসহ কয়েকজন ছাত্র অধ্যক্ষে সৈয়দ হোসেনের পক্ষ হয়ে শনিবার সংঘঠিত ঘটনায় ছাত্রদের মাঝে উত্তেজনা ছড়ান। বিষয়টি ভিডিও ফুটেজ ও ছবির মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খতিয়ে দেখছেন।

মাদ্রাসার শিক্ষক ও দুদকের সততা সংঘের সমন্বয়ক মোহাম্মদ ইছহাক জানান, সততা স্টোর থেকে পাঠানো অর্থ অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেন তাকে জমা রাখতে বলে গোপনে তাঁর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে ঘটনাটিকে সংঘাতে পরিণত করতে ছোট ছোট ছাত্রদের উত্তেজিত করে তোলেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক অধ্যক্ষের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এদিকে অর্থ বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি বরং অধ্যক্ষ সততা স্টোরের সমন্বয়কের কাছে টাকা জমা রাখতে বলে উল্টো দুদুকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান দুদুকের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সভাপতি শাহ সিরাজুর রহমান সজল। তিনি আরও জানান, অধ্যক্ষের এই আচরণে ফলে বরাদ্দের ওই টাকা সততা স্টোরের সমন্বয়কের মাধ্যমে দুদুকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তবে সহকারী সুপারের অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেন বলেন, প্রথম ক্লাস শেষে সততা সংঘের অর্থ বিতরণ নিয়ে মাদ্রাসার চার শিক্ষক অতর্কিত আমার উপর হামলা চালায়। এসময় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন বলে জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা কখনো আমরা আশা করি না। শনিবারের ঘটনায় থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনকে প্রধান ও মাধমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাডেমিক সুপারভাইজার সোহেল মিয়াকে সদস্য সচিব করে পাচঁ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মদিনাতুল উলুম আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ হোসেনের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি করা দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে সংঘাতের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন