দেশজুড়ে আলোচিত চকরিয়ায় নির্যাতিত মা-মেয়ের ঘটনার নেপথ্যে কাহিনী!

fec-image

দেশজুড়ে আলোচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কক্সবাজারের চকরিয়ায় মা ও দুই মেয়েসহ পাঁচজনের ওপর বর্বরতার ঘটনার পেছনে নতুন নতুন কাহিনীর অবতারণা হচ্ছে।

বিশেষ করে ওই পরিবারের এক যুবতী নারীর সঙ্গে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানের সম্পর্ক ও পরবর্তীতে তার বিচ্ছেদ নিয়ে বিরোধের কথা উঠে আসছে। আর সেটার জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে পুরো পরিবারকে গরু চুরির মতো অপবাদ দিয়ে বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

নির্যাতিতা পরিবারের প্রধান ভিকটিম পারভীন আক্তারের তৃতীয় কন্যা ডেজি আক্তারের স্বামী মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবজোম গ্রামের ছাবের আহমদের ছেলে পান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রুবেল গতকাল চকরিয়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এসব অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, তার স্ত্রীর বড় বোন সেলিনা আক্তার সেলির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জের ধরে পরিকল্পিতভাবে গরু চুরির মতো ঘটনার অপবাদ দিয়ে নারকীয় এই বর্বরতা চালানো হয়েছে।

তিনি জানান, ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে সপরিবারে তার শ্বাশুড়ি পারভীন আক্তার, দুই কন্যা সেলিনা আক্তার সেলি ও রোজিনা আক্তার এবং ছেলে মো. এমরানকে নিয়ে সিএনজি চালিত একটি অটোরিক্সায় চেপে চট্টগ্রামের পটিয়ার ভাড়া বাসা থেকে রওনা দেন চকরিয়ার উদ্দেশ্যে। তাদের গন্তব্য ছিল চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটের শেষ সীমানা হায়দারনাশীস্থ খালা শ্বাশুড়ি (পারভীনের ছোট বোন) হাজেরা খাতুনের বাড়িতে।

কোন মাধ্যমে এই খবরটি জেনে চেয়ারম্যান মিরান পরিকল্পিতভাবে গরু চুরির মতো এ ঘটনার জন্ম দেন।

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গতকাল মা ও দুই মেয়ের জামিন আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর আদালত হাজতে থাকা মা পারভীন আক্তার ও সেলিনা আক্তার সেলির সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মো. মতিউল ইসলাম।

এছাড়া বিভিন্ন সংস্থাও জামিন হওয়া তিন নারীর স্বাক্ষ্য নেন বলে জানা গেছে। এতে নির্যাতিতা তিন নারীর কেউই চেয়ারম্যান মিরানের সঙ্গে তাদের পরিবারের কোন নারীর সম্পর্ক থাকার বিষয়টির উল্লেখ করেননি বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার অভিযুক্ত হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে যেসব বক্তব্য আসছে তার কোনটাই সত্য নয়।

এমনকি নারীঘটিত যে বিষয়টি ফলাও করা হচ্ছে তারও কোন সত্যতা নেই। আমার সাথে ওই পরিবারের কারোরই পূর্ব যোগাযোগও নেই। আমি তাদের চিনিও না। এসব বিষয় আমি তদন্ত দলকেও বলেছি।’

নির্যাতিতাদের পরিচয় গোপনের রহস্য :

চকরিয়ায় গরু চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত তিন নারীসহ পাঁচজন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় যে পরিচয় দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে জানা গেছে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ার শান্তিরহাট বলে দাবি করা হলেও তাদের আসল ঠিকানা হচ্ছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের আদিলপুর গ্রামে।

তারা সবাই রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চিহ্নিত গরু চোর ও মাদক কারবারি। কুখ্যাত এজলাস ডাকাত ও মাদক ব্যবসায়ী রবিজার বংশধর তারা। তবে তারা বেশিরভাগ সময় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে মাদক ব্যবসা করেন।

নির্যাতনের শিকার পারভিন আক্তার (৪০) এর প্রকৃত নাম সাজেদা বেগম প্রকাশ সাজ্জনি। তার স্বামীর নাম মনছুর আলী হলেও থানায় লিপিবদ্ধ করেছেন আবুল কালাম নামে। তার ছেলের নাম মো. জোবায়েদ (২১) এর প্রকৃত নাম গোপন করে লিখেছেন মো. এমরান।

নির্যাতনের শিকার অপর দুই মেয়ে হলেন সেলিনা আকতার শেলি (২৮) ও রোজিনা আক্তার (২৩)। তারাও মায়ের সাথে মাদক ব্যবসা ও গরু ছাগল চুরির সাথে জড়িত।

অথচ চকরিয়া থানায় আটকের পর তারা ভুয়া নামের পাশাপাশি ঠিকানা বলেছিলেন পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায়। তবে সাজেদা বেগমের স্বামী মনছুর আলীর গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা থানার পড়ৈকোড়া ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায়। সাজেদা বেগমের ছোট ভাই মো. নাজিম উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেলে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় নির্যাতনের শিকার পারভিন আক্তার (৪০) এর প্রকৃত নাম সাজেদা বেগম প্রকাশ সাজ্জনি। সে পুলিশের কাছে প্রকৃত নাম গোপন করেছেন। তার স্বামীর নাম মনছুর আলী হলেও সেখানে লিপিবদ্ধ করেছেন আবুল কালাম নামে।

তার ছেলের নাম মো. জোবায়েদ (২১) এর প্রকৃত নাম গোপন করে লিখেছেন মো. এমরান। নির্যাতনের শিকার অপর দুই মেয়ে হলেন সেলিনা আকতার শেলি (২৮) ও রোজিনা আক্তার (২৩)। তারা ও মায়ের সাথে মাদক ব্যবসা ও গরু ছাগল চুরির সাথে জড়িত।

অথচ চকরিয়া থানায় আটকের পর তারা ভুয়া নামের পাশাপাশি ঠিকানা বলেছিলেন পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায়। তবে সাজেদা বেগমের স্বামী মনছুর আলীর গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা থানার পড়ৈকোড়া ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায়। সাজেদা বেগমের ছোট ভাই মো. নাজিম উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালি এলাকার মো. আহমদ কবির জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় আটক সাজেদা বেগম প্রকাশ সাজ্জনি রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের কুখ্যাত মৃত এজলাস ডাকাতের মেয়ে।

কর্ণফুলি নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তারা ইছাখালি আদিলপুর গ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়েন প্রায় দু‘যুগ আগে।

সাজ্জনির মা মৃত রবিজা খাতুনও ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞি। মায়ের হাত ধরেই পরিবারের সবাই এখন মাদক কারবারের সাথে জড়িত। সাজেদা বেগম সাজ্জনির তিন মেয়ে এক ছেলের সবাই আন্তজেলা মাদক কারবারি বলে এলাকায় প্রচার আছে।

তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও সাজেদা বেগম সাজ্জনি চন্দনাইশ উপজেলায় গরু চুরি করে পালানোর সময় গ্রামের লোকজন ধরে ফেলেন। পরে স্থানীয়রা শালিস করে মুচলেখা দিয়ে ছাড়া পান। এভাবে কিছুদিন পরপর গরু ছাগল নিয়ে আসতো আদিলপুরের বাড়িতে। এবং সেগুলো বিক্রি করতো এলাকায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন