পানছড়িতে মাদ্রাসায় প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই)’ স্কিম এর আওতায় প্রণোদনার টাকা বিতরণে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের বরাদ্দকৃত টাকা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিতরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ এনেছেন মাদ্রাসার আলিম শাখার আরবি প্রভাষক নুরুল আমিন মজুমদার।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন (পিবিজিএসআই) স্কিম সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইডিপি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ঢাকা এর মাধ্যমে প্রণোদনার অর্থ হিসেবে পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। যার মধ্যে এক লাখ টাকা পাবে শুধুমাত্র ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকগণ। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা না মেনে আমাকে (প্রভাষক নুরুল আমিন মজুমদার) বাদ দিয়ে, এবতেদায়ী শাখার শিক্ষকগণ, অফিস সহকারী, দপ্তরি, নৈশ প্রহরী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়াকে এ টাকা প্রদান করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আরবি বিভাগের প্রভাষক নুরুল আমিন মজুমদারের করা একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া আফরোজ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অরুপ চাকমাকে তদন্ত করে মতামত/ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে ইউএনও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। বিশ্বস্থসূত্রে জানা যায়, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বিতরণকৃত শিক্ষকদের প্রণোদনার অংশের টাকা ও নুরুল আমিন মজুমদার স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত আরবি প্রভাষক হয়েও টাকা না পাওয়ার বিষয়টি বিধিবর্হিভূত। কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে টাকা বিতরণ করা, সরকারি কোনো বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়নি এবং টাকা বিতরণে শিক্ষা অফিসের সাথে কানো আলোচনা করা হয়নি। তাছাড়া বিধি মোতাবেক ১০.৭৫ অনুপাতে টাকা বিলি করার কথা থাকলেও, সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করে নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে টাকা বিতরণ করার কথা উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকতা।
পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ মাদ্রাসার অনিয়মের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদ্রাসায় গিয়ে সপ্তাহে ছয় দিনের তালিকাভুক্ত একটি ক্লাশ রুটিন দেয়ালে ঝুলতে দেখেছি। জানি না এটা কত বছরের পুরনো। ক্লাশ রুটিন মাদ্রাসা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয় না। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের নির্ধারিত রুটিন অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়নি। তাছাড়া অফিস সহকারীকে দিয়ে করানো হয় ছয়টি ক্লাশ। সব ধরনের হিসাব-নিকাশের কাজ মাদ্রাসা সুপার নিজেই করেন বলে তিনি এই প্রতিদেককে জানান।
জানা যায়, বর্তমানে মাদ্রাসাটি আলিম হওয়া সত্ত্বেও অধ্যক্ষের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে মাদ্রাসা সুপার নিয়োগ প্রদানের জন্য তৎপরতা চলছে। আলিম শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি নবায়ন নিয়েও চলছে লুকোচুরি। কখন আবার কোন মামলার আসামি হয়ে যাই, এই ভয়ে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসাইন মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠান। গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি বাহার মিয়া, আলিম পর্যায়ের এই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ নিয়োগের উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
প্রায় ৮ বছর ধরে চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি দাখিল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত কিন্তু আলিম পর্যন্ত একাডেমিক অনুমতি ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। আলিম শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি নবায়ন না করা মানেই আলিম শাখা বন্ধ করে দেয়ার একটি সুক্ষ্ম পায়তারা বলেও অনেকে জানান। আলিম শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি নবায়ন করে চালু রাখার জন্য প্রশাসন ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা।
পানছড়ি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবুল কাশেম বলেন, ম্যনেজিং কমিটির সাথে আলোচনা করেই প্রণোদনার টাকা বিতরণ করেছি। তাছাড়া আলিম শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি জুন মাসে শেষ হয়েছে। নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, প্রণোদনার টাকা ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর নিযোগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু পাবে। তিনি আরো বলেন, উপজেলা পর্যায়ে একটি আলিম মাদ্রাসা অবশ্যই দরকার। এ ব্যাপারে তিনি দেখবেন বলে জানান।