parbattanews

পাহাড়ে ডি ইসলামাইজেশন চলছে কিনা খতিয়ে দেখার দাবী নেটিজেনদের

পাহাড়ে কি পরিকল্পিতভাবে ডি ইসলামাইজেশন চলছে? খাগড়াছড়িতে এক নও মুসলিমের লাশ চিতায় দাহ করার পর বান্দরবানে আরেক নও মুসলিমকে হত্যার পর এ প্রশ্ন উঠেছে পাহাড়ের বিভিন্ন মহলে।

গতকাল রাতে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে নও মুসলিম ওমর ফারুক(৫০)কে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরার পথে ডেকে নিয়ে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ হত্যা করার পর পার্বত্যনিউজের পাঠকরা প্রধান কার্যালয়ে ফোন করে তাদের উদ্বেগের কথা জানান। এ ছাড়াও পার্বত্যনিউজের পাঠকরা ম্যাসেঞ্জারেও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। স্যোশাল মিডিয়াতেও অনেকে এ প্রশ্ন তুলেছেন।

খবরে প্রকাশ, শুক্রবার (১৮জুন) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭কি:মি দূরে সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়াডের তুলাছড়ি পাড়ায় ওমর ফারুক(৫৪) নামে এক নও মুসলিমকে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা । ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিলো পূর্ণচন্দ্র ত্রিপুরা। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিনি খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। এজন্য একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ হুমকি দিয়ে আসছিল।

সূত্রে আরও জানা যায়, রাতের বেলা নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন কিছু লোক তাকে জঙ্গলের ভিতরে যাওয়ার জন্য বললে তখন তিনি ভয়ে জঙ্গলের দিকে না গিয়ে মসজিদের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে । তখন দূর থেকে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে গুলি করে । তখন তিনি তৎক্ষণাৎ মাটিতে পড়ে । পরে এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সহায়তায় তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃত উদ্ধার করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডে জন্য জেএসএসকে দায়ী করেছে নিহতের পরিবার। পরিবারের দাবী, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় ওমর ফারুককে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল রোয়াংছড়ি উপজেলার সাবেক এক জনপ্রতিনিধিসহ তার সঙ্গীরা। বর্তমানে তার পরিবারও আতংকে রয়েছে।

এদিকে গত ১৪ জুন খাগড়াছড়িতে নুসরাত জাহান নামে নিহত এক নও মুসলিমের লাশ চিতায় দাহের মাধ্যমে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে নিহতের পরিবার। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে নুসরাত জাহানের নাম ছিলো নিবেদিতা রোয়াজা। কোনো মুসলমানের লাশ কোনো অবস্থায় চিতায় দাহ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে খাগড়াছড়িতে মুসলমানদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

খবরে প্রকাশ,   নিহত নিবেদিতা রোয়াজা ছিলেন খাগড়াছড়ির সাবেক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। মুসলিম ধর্মের ছেলে মামুন মিল্লাতকে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করে নাম নেন নুসরাত জাহান। ধর্মান্তরিত হওয়া ও বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করার কারণে তার উপর একের পর এক হুমকি আসায় তিনি খাগড়াছড়ি ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।

স্বামী মামুন মিল্লাত নিজেকে ৩৮তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারেন, মামুন পুলিশ কর্মকর্তা নন। এরপর থেকে তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো বলে জানান রাজধানীতে থাকা বাসার প্রতিবেশীরা।

গত শনিবার (১২ই জুন ২০২১) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সংসদ সচিবালয় কোয়ার্টার থেকে ২৮ বছর বয়সী নিবেদীতা রোয়াজা (নুসরাত জাহান) এর গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নুসরাত তার স্বামী মামুন মিল্লাতের সঙ্গে থাকতো ঐ বাসায়। সেদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত মামুন মিল্লাতকে বাসায় দেখতে পান প্রতিবেশীরা। এরপর তিনি উধাও হয়ে যান।

এদিকে ১৫ জুন ২০২১ তারিখে র‌্যাব-২ এর একটি অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে রাজধানী দারুস সালাম থানাধীন কল্যাণপুর খাজা সুপার মার্কেট এর শাহ ফতেহ আলী পরিবহন এর টিকেট কাউন্টারের ভিতরে উক্ত মামলার প্রধান আসামী মোঃ মিল্লাত মামুন (এজাহার ভুক্ত ১নং আসামী) অবস্থান করছে। প্রাপ্ত সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে র‌্যাব-২ এর আভিযানিক দল উক্ত স্থানে উপস্থিত হলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাকালে আসামী মোঃ মিল্লাত মামুনকেকে(২৭) আটক করে।

এদিকে নুসরাত জাহানের মরদেহ ঢাকায় ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার(১৩ জুন) রাতে খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়ায় পিতার বাড়িতে আনা হয়। পরদিন সোমবার(১৪ জুন) সকালে হিন্দু মতে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ চিতায় দাহ সম্পন্ন করা হয়। অথচ নুসরাত জাহান ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

মুসলিম নুসরাতের লাশ হিন্দু মতে, চিতায় দাহ করায় খাগড়াছড়ির ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে ক্ষোভ দেয়া যায়। তাদের অনেকেই বর্তমান প্রতিবেদককে এ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরাম ফর সিএইটি’র ব্লগার আরিফ এম হোসেন পার্বত্যনিউজকে বলেন, নিবেদিতা রোয়াজা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। স্বামীর সাথে তার যাই ই ঘটে থাক তিনি মুসলিম ছিলেন। তাই কোনো মুসলিমের লাশ কোনোভাবেই চিতায় দাহ হতে পারে না। নিয়ম অনুযায়ী তার লাশ দাফন হওয়ার কথা এবং এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখা উচিত ছিলো।



আরেক ব্লগার আকতার হোসেন গতরাতে টেলিফোনে পার্বত্যনিউজের কাছে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, পাহাড়ে নও মুসলিমরা সার্বিকভাবে উদ্বেগে রয়েছে। নুসরাতের লাশ দাহ করার পর আজ যে নও মুসলিম ওমর ফারুককে হত্যা করা হলো তাকে কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা শুরু থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিলো। তিনি পাহাড়ের নও মুসলিমদের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সভাপতি ও ঢাবি ছাত্র মিনহাজ তৌকি পার্বত্যনিউজকে বলেন, এর আগে টেকনাফে হালিমা তুস সাদিয়া নামে এক নও মুসলিমের লাশ তার পিতার পরিবার সীমা বৌদ্ধ বিহারে শেষ কৃত্য শেষে দাহ করে ফেলে। তার পূর্ব নাম ছিলো লাকিংমে চাকমা। বাঙালি ছেলে আতাউল্লাহকে ভালবেসে বিয়ে করে হালিমা তুস সাদিয়া নাম গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, লাকিংমের পিতা লালা অং অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালী চাকমাপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে লাকিংমে চাকমাকে অপহরণ করা হয়।  কিন্তু স্বামী দাবি করে আতাউল্লাহর দাবী ছিলো, ‘২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি কুমিল্লায় লাকিংমে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হালিমাতুস সাদিয়া নাম ধারণ করে এবং একই দিন এফিডেভিট মূলে আমরা (আতাউল্লাহ) বিবাহ সম্পন্ন করি। পরে আমাদের সংসারে একটি সন্তানও রয়েছে। যার বয়স এক মাসের কাছাকাছি। গত ৯ ডিসেম্বর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের আগে লাকিংমের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এতে অভিমান করে কীটনাশক পান করে।

গত ১০ ডিসেম্বর ২০২১ রাতে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুমূর্ষু লাকিংমেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন থেকে লাকিংমের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে ছিল।

ভুক্তভোগী পরিবার আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে অপহরণ নয় মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দেয়। তবে তদন্তে প্রমাণিত হয় নিহত হালিমার বয়স ১৬ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আইনমতে আদালত তার লাশটি পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেন। এরপর তার পিতামাতা রামুর সীমা বৌদ্ধ বিহারে শেষ কৃত্য করে তার লাশ দাহ করে।

তার স্বামী আতাউল্লাহর দাবী, হালিমা তার স্ত্রী। বর্তমানে তাকে ইসলাম ধর্ম মতে দাফন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালতের নির্দেশে পিতা-মাতার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

মিনহাজ তৌকির দাবি, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে একের পর এক এ ধরণের ঘটনা মেনে নেয়া কঠিন। তাই সার্বিকভাবে পাহাড়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ডি ইসলামাইজেশন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সরকার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীরসহ সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছেন তিনি।

Exit mobile version