এবার মিশনারীদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ আনলেন বান্দরবানের চাক সম্প্রদায়ের বৌদ্ধরা
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ অনেক পুরাতন হলেও যারা মূলত এর শিকার তিন পার্বত্য জেলার সেই উপজাতীয় ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় অনেকটাই নীরব ছিলেন এতোদিন। তবে সেই নীরবতা ভেঙে মুখ খুললেন বান্দরবানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাক সম্প্রদায়ের নেতারা। গত ২৯ অক্টোবর ২০১৪ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন চাক সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।
৩২ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেতার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও ৬টি মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার সংস্থা, বিজিবি-পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসিসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ সমিতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। স্মারকলিপির সাথে নব্য খ্রিষ্টান প্রচারক চাক ছেলে-মেয়েদের একটি নামের তালিকাও সংযুক্ত করা হয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আদর্শ তথ্য কেন্দ্র ধম্মইনফো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, নামেমাত্র সাহায্য-সহযোগিতার প্রলোভনে ধর্মান্তর করা হচ্ছে বাংলাদেশের পাহাড়ী বৌদ্ধদের – এমন অভিযোগ সর্বদাই থাকলেও বেশ দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবেই এমন এক অভিযোগ তথ্য-উপাত্তসহ তুলে ধরেছে “চাক” সম্প্রদায়। বাংলাদেশের পাহাড়ীদের মধ্যে অন্যতম বৌদ্ধ সম্প্রদায় “চাক” সম্প্রদায়ের নেতারা ধর্মান্তরের অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় খ্রীস্টান মিশনারীগুলোর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধর্মান্তরের কর্মকাণ্ড নিভৃতে চললেও অবশেষে রাষ্ট্র প্রধানের কাছে প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি দিতে বাধ্য হয়েছে চাক সম্প্রদায়।
এমনিতেই পার্বত্য এলাকার এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের একটি অভিযোগ, এরা স্বাস্থ্যসেবা, মানবসেবা ও দারিদ্রবিমোচন সম্পর্কিত সেবার নামে কার্যত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা ছিল স্বাধীন, সার্বভৌমত্ব ও সেক্যুলারিজম রাষ্ট্র গঠন করা। পরবর্তী বাংলাদেশ সংবিধানে ৪১ অনুচ্ছেদ (ক) এবং (খ) ধারায় সুষ্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
চাক সম্প্রদায়ের পক্ষে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিন্ন ভাষা-ভাষী ও ১১টি ক্ষুদ্র অধিবাসীর মধ্যে চাক জনগোষ্ঠী অন্যতম। ঐতিহ্যগতভাবে তারা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী অনুসারী। কিন্তু বিদেশী দাতাদের মদদ ও আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যান্তরে বসবাসকারী কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত খ্রিষ্টায়ান ধর্মীয় (বাংলাদেশ প্রধান কার্যালয় এপিএবি কমপ্লেক্স ছাত্র হোষ্টেল ও সানরাইজ হাই স্কুল দাতারাম চৌধুরী সড়ক, চৌধুরী হাট, ফতোয়াবাদ, হাটাজারী, চট্টগ্রাম) এবং ২য় শাখা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের রেস্ট হাউজ সংলগ্ন কবির মৌলভীর ভাড়া বাসায় বসে ধর্মান্তরিত করার এ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
স্মারকলিপিতে তারা আরো অভিযোগে করেন, মিশনের মাধ্যমে হাজার বছর ধরে ঐতিহ্যগতভাবে বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ক্ষুদ্র চাক জনগোষ্টীর ছেলে-মেয়েদেরকে নামে মাত্র পড়ালেখার খরচ যোগানে অজুহাতে আর্থিক প্রলোভন দিয়ে সম্পূর্ণ খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কৌশল অবলম্ব করা হচ্ছে। যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে তারা বৌদ্ধ ধর্মে গিয়ে ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত হেনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। এমনকি তারা বৌদ্ধ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ও কটুক্তি করছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে চাক সম্প্রদায়ের নেতা ছানু অং চাক, বাচাচিং চাক, নাইন্দা অং চাক, ফোছা অং চাক, অংথোয়াইচিং চাক জানান, খ্রীশ্চিয়ান মিশন কর্তৃক চাক ছেলে মেয়েদেরকে ধর্মান্তরিত করার কারণে ভবিষ্যতে বড় ধরণের ধর্মীয় দাঙ্গা হাঙ্গামার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় আইন ও আর্ন্তজাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। তাই তথাকথিত খ্রীশ্চিয়ান ধর্মীয় মিশন কর্তৃক ধর্মান্তরিতকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রশাসনিক সহায়তা পেতে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় ধর্মান্তরিত হওয়া চাক উপজাতিদের একটি বড় অংশ দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। নিয়মিত আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ধর্মান্তরিত করার কিছুদিন পর অর্থ প্রদান বন্ধ করে দেওয়া এবং খ্রিষ্টান ধর্ম শুদ্ধভাবে পালনে চাপ দেওয়ার কারণেই তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন করে ধর্মান্তরিত ঠেকাতে সীমান্ত অঞ্চল নাইক্ষ্যংছড়িতে ‘আদিবাসী ধর্ম রক্ষা পরিষদ’ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র মতে, ধর্মান্তরিত করার এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে বেশ কয়েকটি এনজিওর নাম প্রায় সময় উঠে আসে। গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদে এসব এনজিওগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ (সিসিডিবি), অ্যাডভানটেজ ক্রুশ অব বাংলাদেশ, হিউম্যানেটারিয়ান বাংলাদেশ, গ্রিন হিল, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা (গ্রাউস), কারিতাস, ইভানজেলিক্যাল ক্রিশ্চিয়ান ক্রুশ, শান্তি রানী ক্যাথলিক চার্চ, জাইনপাড়া আশ্রম উদ্যান, আশার আলো, মহামনি শিশুসদন, বৈশানীয়, তৈমু প্রভৃতি। অভিযোগ উঠেছে, এসব সংগঠন মাসিক নগদ অর্থসহায়তা ও প্রতি সপ্তাহে চাল, ঢাল, তেল, কৃষি সামগ্রী সরবরাহের শর্তে এলাকার গরিব মানুষকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। অর্থঋণসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গরিব মানুষকে প্রলুব্ধ করছে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হতে।