বান্দরবানে বহুল বিতর্কিত এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ

wv
জমির উদ্দিন :

বান্দরবানে আর্ন্তজাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে এনজিও ব্যুরো। নির্দেশ পাওয়ার পরপরই ওয়ার্ল্ড ভিশনের কার্যক্রম গুটিয়ে ও কার্যালয়ের আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। বান্দরবান ওয়ার্ল্ডভিশন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়স্থ এনজিও ব্যুরোর কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বান্দরবান জেলায় ওয়ার্ল্ড ভিশন আর কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালনা করতে পারবেনা। সে পত্র মোতাবেক বান্দরবান শহরের বাস স্টেশন এলাকায় অবস্থিত ওয়ার্ল্ডভিশন কার্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে। ঠিক কি কারণে বান্দরবানে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হলো সে বিষয়ে কোনো পক্ষই মুখ খলছে না।

তবে ওয়ার্ল্ড ভিশন নামক এই আন্তর্জাতিক এনজিওটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রিশ্চিয়ানাইজেশন, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতায় উষ্কানী প্রদান, পক্ষপাত দুষ্টু কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ করে আসছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী অধিবাসীরা। বিভিন্ন সরকারী ও গোয়েন্দা তদন্তে এর প্রমাণও মিলেছে। এ ধরনের রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও ও মিশনারী সংস্থাগুলো কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের সুপারিশও করা হয়েছে সেসব রিপোর্টে। সেকারণে পার্বত্য বাঙালীরা দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের এ ধরণের এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবী করে আসছিলো। ওয়ার্ল্ড ভিশন এনজিও’র বান্দরবনে ডাইরেক্ট একশন(ডাক) বা সরাসরি কর্মকাণ্ড বন্ধের নির্দেশ তারই অংশ বলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র পার্বত্য নিউজকে নিশ্চিত করেছে। শুধু ওয়ার্ল্ড ভিশন নয় পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রবিরোধী কিম্বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত সকল এনজিও ও মিশনারী সংস্থাকেই একে একে নিয়ন্ত্রেণের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার বলে দাবী করেছে সূত্রটি।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের বান্দরবান এডিপি ম্যানেজার টিমথি উজ্জ্বল কান্তি সরকার জানান, আশির দশকের আগে থেকে ওয়ার্ল্ডভিশন বান্দরবান জেলায় জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সরকার ওয়ার্ল্ড ভিশনের কার্যক্রম নবায়ন না করে বরং  কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংস্থাটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরফলে ওই মেয়াদের (৩০ সেপেম্বর) মধ্যেই আমরা বান্দরবানে ওয়ার্ল্ডভিশনের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেছি। তিনি আরো জানান, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বিরোধিতায় সরকার ওয়ার্ল্ড ভিশনের নবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার বলেছে ওয়ার্ল্ড ভিশন আর্ন্তজাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, তাই বাংলাদেশে সরাসরি সংস্থাটি কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তবে ওয়ার্ল্ড ভিশন স্থানীয় এনজিওর সাথে পার্টনারশীপে জনহিতকর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

জানাগেছে, ওয়ার্ল্ড ভিশন ৮জন কর্মকর্তা ও ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সীমিত আকারে বান্দরবান সদর উপজেলার সদর, কুহালং ও সুয়ালক এই তিনটি ইউনিয়ন ও বান্দরবান পৌর এলাকায় কৃষি বিষয়ক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু কল্যাণ ও দুর্যোগকালীন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচলনা করে আসছিল। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার ১ হাজার ২৮০ জন ওয়ার্ল্ড ভিশনের স্পন্সর ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থিক ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছিল।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে বাস স্টেশন এলাকায় অবস্থিত ওয়ার্ল্ডভিশন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে সংস্থাটির আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এসময় দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানের মাঠে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ডভিশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মোতাবেক নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে অপ্রয়োজনীয় কাগজ পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাই এসব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ভিশনের সরাসরি কর্মকাণ্ড বান্দরবানে বন্ধ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বান্দরবানের বাঙালী জনগোষ্ঠী। একই সাথে তারা একই ধরণের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত অন্যসকল এনজিও, দাতা সংস্থা ও মিশনারী প্রতিষ্ঠানের সরাসরি কার্যক্রম শুধু বান্দরবান নয় তিন পার্বত্য জেলাতেই বন্ধের দাবী জানিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন