ফ্রিল্যান্সিং করে মহালছড়ির থৈইঅংগ্য মারমার আয় মাসে লাখ টাকা

fec-image

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার থলিপাড়া গ্রামের থৈইঅংগ্য মারমা। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন দলের জার্সি পরে ঘুরে বেড়াতেন। পাহাড়ে বসে স্বপ্ন দেখতেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। তাঁর শখ ছিল জার্সির ডিজাইন করা। তাই নিজের মুঠোফোনে বিভিন্ন জার্সির ছবি সম্পাদনা করতেন নিজের মতো করে। এসব করতে গিয়ে জানতে পারলেন, গ্রাফিক ডিজাইন শিখে পেশাদার মানের জার্সির নকশা করা যায়। সেগুলো ভালো মানের হলে দেশ–বিদেশে ভালো মূল্য পাওয়া যেতে পারে।

গ্রাফিক ডিজাইন শিখলেন। আউটসোর্সিংয়ের কাজ কীভাবে পাওয়া যায়, তা–ও জানলেন। এরপর অনলাইনে কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ খোঁজা শুরু করলেন। ফাইভার মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে থাকলেন। এখন এর বাইরের অনেক ক্রেতার সঙ্গে থৈইঅংগ্য মারমা কাজ করছেন। তাঁর করা জার্সির নকশা কিনে নেন বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা। সেই নকশা ধরে তৈরি হয় জার্সি। মূলত বিভিন্ন দেশের ফুটবলার ও বাইকারদের জন্য জার্সির নকশা করেন তিনি। প্রয়োজনে বাংলাদেশে জার্সি তৈরি করে বিদেশি ক্রেতার কাছেও পাঠান।

সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশের কাজ করছেন থৈইঅংগ্য মারমা। আয়ও করছেন মাসে লাখ টাকার ওপরে। ১০ এপ্রিল মহালছড়িতে থৈইঅংগ্য মারমার নিজ বাড়িতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি শোনান তাঁর সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হয়ে ওঠার গল্প।

টুকটাক নকশা থেকে শুরু
২০১৭ সালে মহালছড়ি মডেল পাইলট স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন থৈইঅংগ্য মারমা। এরপর ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে সরকারি বাঙলা কলেজে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। পার্বত্য অঞ্চলে ইন্টারনেটে গতি খুব কম। তাই ঢাকায় বসে কাজ করেন থৈইঅংগ্য মারমা। মাঝেমধ্যে চলে যান মহালছড়ির নিজ বাড়িতে।

কথায় কথায় থৈইঅংগ্য মারমা জানালেন, তিনি অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে একসময় টুকটাক নকশা করতেন। এ সময় বড় ভাই রিপ্রু মারমা থৈইঅংগ্য বলেন, গ্রাফিক ডিজাইনের কোর্স করো বা শিখে রাখো। তখন একটি প্রতিষ্ঠানে শেখা শুরু করলেও বিভিন্ন কারণে সেটি শেষ করতে পারেননি।

অনুপ্রেরণা একটি প্রতিবেদন থেকে
থৈইঅংগ্য মারমা গত বছর দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বনে বসে সুবীরের ডলার আয়’ প্রতিবেদন পড়ে অনুপ্রাণিত হন। আবার গ্রাফিক ডিজাইন শেখার আগ্রহ পেলেন। সুবীরের আইটি প্রতিষ্ঠানে অনলাইন প্রশিক্ষণে যুক্ত হলেন। প্রবল আগ্রহের সুবাদে প্রশিক্ষণ চলাকালে প্রথম একজন ভারতীয় ক্রেতার কাজ পেলেন। সেই কাজে পারিশ্রমিক ছিল ৫০০ রুপির মতো। এরপর ৫০ ডলার আয় করেন। তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি।

ধীরে ধীরে আসে সফলতা
ফাইভারে কাজ করতে করতে একসময় সিঙ্গাপুরের এক ক্রেতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতিটি জার্সি ডিজাইনের জন্য ৩০ ডলার করে চুক্তিবদ্ধ হন থৈইঅংগ্য। ভালো কাজের সুবাদে পরে সাপ্তাহিক ২০০ ডলার করে আরেকজন ক্রেতার কাজ পান থৈইঅংগ্য। এখন প্রতি মাসে দেড় হাজার ডলারের বেশি উপার্জন করেন থৈইঅংগ্য মারমা।

থৈইঅংগ্য মারমা বলেন, ‘শুরুটা সহজ ছিল না। আমার কম্পিউটার ছিল না। পরিবারের কাছে চাইব, সেটাও সম্ভব ছিল না। কারণ, পরিবারের সামর্থ্য ছিল না। শুধু মনে প্রবল আগ্রহ ধরে রেখেছিলাম। এরপর নিজে ফুডপান্ডাতে চাকরি নিই। টাকা জমিয়ে কম্পিউটার কিনে ফেললাম। তারপর সেই কম্পিউটার নিয়ে কাজ শুরু।’

থৈইঅংগ্য মারমারা দুই ভাই ও ছয় বোন। তিনি সবার ছোট। থৈইঅংগ্য বলেন, ‘আমাদের পরিবার মা খুব কষ্ট করে চালাতেন। এখন আমি মা ও পরিবারকে সহায়তা করতে পারছি। আমার মা ক্রাজাই মারমা ও বাবা কংচাই মারমা কৃষিকাজ করেন। এখন তাঁদের দায়িত্বও আমি নিয়েছি।’

থৈইঅংগ্য মারমা এ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতাদের কাজ করেছেন। সিঙ্গাপুরের টোটাচি কোম্পানি নিয়মিত তাঁর করা জার্সির ডিজাইন নিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দি ওন ব্র্যান্ড, সৌদি আরবের টামনাউ ডটকমের হয়ে জার্সির নকশা করেন তিনি।

প্রথম মাসের আয়ে স্বপ্নের ল্যাপটপ
থৈইঅংগ্য মারমা বলেন, গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স শেষ করার এক মাসের মধ্যে আয় করতে শুরু করি। পরে আমার একসময়ের স্বপ্নের ল্যাপটপ ম্যাকবুক এয়ার এম–২ কিনে ফেলি এক মাসের আয় দিয়ে।’ এটি দিয়ে এখন কাজ করেন তিনি।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ির থৈইঅংগ্য মারমার ফেসবুক প্রোফাইলে তাঁর নকশা করা জার্সির ছবি রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ডিজাইন দেখা যাবে এ ওয়েবসাইটে।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন