বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?

fec-image

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় আগামী ০৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই জনপদটির ভাঁজে ভাঁজে বারুদের গন্ধ আর রক্তে লাল হয় পাহাড়। সারাবছর সশস্ত্র সংঘাতের কারণে পুরো বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বাঘাইছড়ি উপজেলা।

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হত্যাকাণ্ড:

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যার দিকে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন শেষে উপজেলা সদরে ফেরার পথে নয় কিলো নামক এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে নির্বাচনি কাজে জড়িত আটজন কর্মকতা নিহত হন।

ঘটনাস্থলে চারজন এবং উপজেলা সদর হাসপাতালে আনার পথে আরও তিন নিহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় আরও পাঁচজন। আহতদের মধ্যে নির্বাচনি এক কর্মকর্তা ০৯ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অর্থাৎ এ ঘটনায় সর্বমোট আটজন নিহত হয়েছিলো।

ঘটনার পর পরই ৪০-৫ ০জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলো পুলিশ। তবে এত বছর পার হলেও ঘটনার সাথে জড়িত কোন আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।

কারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত:

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন প্রসীত গ্রুপের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ওই উপজেলায় কোন প্রার্থী না দিলেও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) তাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছিলো।

কৌশলগত কারণে নির্বাচনে জিততে সশস্ত্র সংগঠনটি ইউপিডিএফ’র সাথে একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। ঘটনাস্থলটি যেহেতু ইউপিডিএফ’র এলাকা সেহেতু এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করা হয়েছিলো। মূলত পিসিজেএসএস’র চেয়ারম্যান প্রার্থী বড় ঋষী চাকমাকে জেতাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটনো হয়েছিলো। নির্বাচনে বড় ঋষী চাকমা হেরে যান এবং ঘটনার পর পরই পালিয়ে যান।

এ হত্যাকাণ্ডের জন্য রূপায়ণ দেওয়ান-সুধাসিন্ধু খীসাদের নেতৃত্বাধীন আরেক সশস্ত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমার (পিসিজেএসএস সংস্কার) বিজয়ী প্রার্থী সুর্দশন চাকমা এবং রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের দীপংকর তালুকদার এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্তু লারমার পিসিজেএসএসকে দায়ী করেছে।

কেমন হবে নির্বাচন:

গতবারের ন্যায় এইবারও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন সন্তু লারমার পিসিজেএসএস’র প্রার্থী অলিভ চাকমা এবং এমএন লারমা গ্রুপের জেএসএস সংস্কারের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে ভোটের দিন নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন সন্তু লারমার পিসিজেএসএস’র প্রার্থী অলিভ চাকমা। তবে জেএসএস সংস্কারের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা নির্বাচন হওয়ার আগে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে চিরুনী অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাহাড়ের আঞ্চলিক দু’দল পিসিজেএসএস এবং পিসিজেএসএস সংস্কার নিজেদের স্ব-স্ব প্রার্থী দিলেও অপর দু’গ্রুপ ইউপিডিএফ এবং ইউপিডিএফ সংস্কার কোন প্রার্থী দেয়নি। প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি। জাতীয় কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নেই এখানে।

সম্প্রতি সন্তু লারমার পিসিজেএসএস এবং প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ’র মধ্যে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলেও ইউপিডিএফ’র মূল শত্রু হলো পিসিজেএসএস সংস্কার। অপরদিকে পিসিজেএসএস সংস্কারের মিত্র হলো ইউপিডিএফ সংস্কার।

এইবারের নির্বাচনেও আবারো চারটি আঞ্চলিক সশস্ত্র দল দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে শক্তি প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে পিসিজেএসএস-ইউপিডিএফ এবং পিসিজেএসএস সংস্কার-ইউপিডিএফ সংস্কার একাট্টা হবে এমনটা ধারণা করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।

২০২৪ এর নির্বাচনে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চের কোন পুনরাবৃত্তি ঘটবে, নাকি শান্তি, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নিরাপত্তা বাহিনীও নির্বাচনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রাখতে কাজ করছে। তবে এলাকাটি যখন বাঘাইছড়ি তখন শঙ্কা থেকেই যায় আদৌ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা এমনটা মনে করছেন স্থানীয় শান্তিপ্রিয় সচেতন মানুষ।

বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাচন নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন:

বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস আল মামুন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী আগের চেয়ে আরও বেশি সচেতন এবং সতর্ক। নিরাপত্তার চাদরে রাখা হবে পুরো এলাকা। তবে কিছু দুর্গম এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হট্টগোল করতে পারে। তবে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না বলে জানান তিনি।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, জেলার নয়টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন শেষ করতে পেরেছি। আশা করছি বাঘাইছড়ি উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করতে পারবো। এইজন্য স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ সকলে সমন্বয় করে কাজ করছে। যেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন