ফেনী নদীর ভাঙ্গণে ভারতে জাগছে নতুন চর, বাংলাদেশ অংশে কমছে

বিএসএফের বাধায় দুই বছর ধরে বন্ধ খাগড়াছড়ির ফেনী নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প

fec-image

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ফেনী নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প অচিরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খন্ড ফেনী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। যা পরবর্তিতে ভারতের ভূ-খন্ড হিসেবে চিহিৃত হবে। যেমনিভাবে মাটিরাঙার আচালং এলাকায় নদীপথ পরিবর্তন বাংলাদেশের প্রায় ৩ হাজার একর ভূ-খন্ড ভারতের দখলে চলে গেছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমা রেখা খরস্রোতা ফেনী নদীর ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বাংলাদেশের সীমানা পিলার ও ফসলী জমি। কোথাও কোথাও নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খন্ড চলে গেছে ভারতের অভ্যন্তরে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী-বিএসএফের বাধায় দুই বছর ধরে থমকে আছে বাংলাদেশ-ভারতী সীমান্ত ফেনী নদী তীর রক্ষা প্রকল্প।

প্রকল্প অনুযায়ী কয়েক বছর আগে ফেনী নদী রক্ষায় সিসি ব্লক নির্মাণ করা হলেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র বাধায় নদীতে ব্লক ডাম্পিং ও প্লেসিং করতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে ফেনী নদীর ভাঙ্গণে বাংলাদেশের বিশাল ভূখন্ড ভেঙ্গে ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আর ভারতীয় অংশে নতুন চর জাগছে।

ফেনী নদীর ভাঙ্গণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ স্থানীয়দের। তবে প্রকল্পের কাজের বাধা দূর করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বাংলাদেশের সরকারি তথ্যে ফেনী নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়িতে। জেলার মাটিরাঙ্গা অঞ্চলের পাহাড় থেকে কয়েকটি ছড়া ফেনী নদীতে গিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমারেখা। এই ফেনী নদীর ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে দুই দেশের সীমানা পিলার ও ফসলী জমি। কোথাও কোথাও নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খন্ড চলে গেছে ভারতের অভ্যন্তরে।

এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় অর্থনৈকি নির্বাহী কমিটির(একনেক) বৈঠকে ফেনী নদীর ভাঙ্গন রোধে ২০১৯ সালে প্রকল্প নেয় সরকার। সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) এর আওতায় বাংলাদেশ সরকার প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার মিটার এলাকায় সিসি ব্লক ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়। যা ২০২৫ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

প্রকল্প অনুযায়ী সিসি ব্লকের নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।দরপত্র অনুযায়ী সিসি ব্লক প্রস্তুত করা হলেও বিএসএফের বাধায় তা নদীতে ডাম্পিং ও প্লেসিং করা যাচ্ছে না। এতে রোধ করা যাচ্ছে না নদীর ভাঙন ইতোমধ্যে নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। নদী ভাঙন রোধে প্রকল্প নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অধিবাসীরা বলেন, ফেনী নদীর ভাঙনের কারণে আমরা আতঙ্কে আছি। পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিএসএফ বাঁধা দেওয়াতে ব্লকের কাজ অসর্ম্পূণ রয়েছে। ব্লকগুলো নদীতে ফেলতে পারলে আমাদের আতঙ্ক দূর হতো। আমাদের নদী পাড়ের জায়গাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। প্রতি বর্ষায় আমাদের ধানি জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে।

মাটিরাঙা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রহমত উল্ল্যাহ বলেন, আমাদের নদী পাড়ের জায়গাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আর ভারতের অংশের চর হচ্ছে। প্রতি বর্ষায় আমাদের ধানি জমি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। ব্লকগুলো বসালে নদী রক্ষাবেক্ষণের জন্য ভালো হবে।

ফেনী সীমান্ত তীর রক্ষা প্রকল্পের ঠিকাদার এ অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা অভিযোগ, যখনই এসব ব্লক নদীতে প্লেসিং করতে গেছি তখন বিএসএফের পক্ষ থেকে বাঁধা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অনেক জায়গায় বিএসফের বাঁধার কারণে ব্লক বানানো যাচ্ছে না। সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী দাম বেড়েছে ফলে দরপত্রমূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে আমাকে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, দরপত্র অনুযায়ী ব্লক প্রস্তত করা হলেও বিএসএফের বাধার কারণে ব্লক নদীতে ডাম্পিং ও প্লেসিং করতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে তিনি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার জানানো হলেও সমস্যা সমাধান হয়নি।

খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ১৯ সালে প্যাকেজের মধ্যে বন্ধ হওয়া ৯টি প্যাকেজ চালু করার জন্য যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। সমস্যা কেটে গেলে বাকী সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ফেনী নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প অচিরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খন্ড ফেনী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। যা পরবর্তিতে ভারতের ভূ-খন্ড হিসেবে চিহিৃত হবে। যেমনিভাবে মাটিরাঙার আচালং এলাকায় নদীপথ পরিবর্তন বাংলাদেশের প্রায় ৩ হাজার একর ভূ-খন্ড ভারতের দখলে চলে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন