আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাস দমনে আরও বেশি সক্ষমতা রয়েছে : আইজিপি
বান্দরবানের রুমা সোনালী ব্যাংক ডাকাতির পর এবার থানচি উপজেলার শাখা কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের দিন দুপুরে লুটপাট চালিয়েছে নতুন গজিয়ে উঠা সন্ত্রাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ। এসময় দুইটি ব্যাংক থেকে ১৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সোয়া বারোটা দিকে দুটি ব্যাংকের লুটপাটে আক্রমণে ঘটনাটি ঘটে।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন।
তিনি জানান, বেলা বারোটার দিকে বাকলাই সড়ক দিয়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা দুটি চান্দের গাড়ি করে থানচি শহরে প্রবেশ করে। এসময় উপজেলার আগে পাহাড় উপর থেকে গুলি রাউন্ড ছুড়ে। পরবর্তীতে তারা দুটি ব্যাংকে প্রবেশ করে লুটপাটের তাণ্ডব চালায়। ব্যাংকের থাকা ভল্ট ভাঙার চেষ্টা চালালে তারা ব্যর্থ হয়। এর আগে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি কক্ষে তালা বদ্ধ করে রাখেন। এসময় লেনদেন অবস্থা থাকার ১৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাক লুটপাট করে নিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।
এদিকে রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন ও উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন ককর্মকর্তারা।
পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক ভাবে যেটি যাচাই- বাছাই করেছি সেটি হল ব্যাংকে থাকার যে ভল্ট সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এবং সেখান থেকে অর্থ নিয়ে গেছে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। সেটি সিআইডি টিম এসে পরীক্ষা নিরিক্ষার পর জানানো যাবে।
পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, গতকাল রাতে ব্যাংক লুটপাট করা পর যারা নিরাপত্তা দায়িত্বে ছিল তাদের কাজ থেকে এসমজি, রাইফেলসহ ১৪টি ও গুলি রাউন্ড ৪১৫টি নিয়ে গেছে। এই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনে আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
জানা গেছে, গতকাল রাত আটটার দিকে রুমা উপজেলার জুড়ে বিদ্যুবিহীন হয়ে যায়। এরপর শতাধিক কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীরা উপজেলার পরিষদ, মসজিদ ও ব্যাংকসহ পুরো এলাকার ঘেরাও করে। এসময় মসজিদে তারাবি নামাজ শেষে মুসল্লিসহ ব্যাংকের কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জিম্মি করে রাখে। এরপরই রাতে সোনালী ব্যাংকে দুর্ধর্ষ লুটপাট চালায়। ব্যাংকের ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ব্যাংকে কোন অর্থ না পেয়ে সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তবে ব্যাংকে ভল্ট ভেঙে অর্থ নিয়ে গেছে কিনা সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাটি পুরো এলাকায় জুড়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি পর উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপজেলার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে। এসময় তারা হাতে ফেস্টুন নিয়ে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনের মুক্তি দাবি করেন।পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রুমা উপজেলা পরিষদের মসজিদ ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, রাত ৮টার দিকে তারাবি নামাজ শেষে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীরা সবাই ঘেরাও করে জিম্মি করে রাখে। পরে তারা ব্যাংকের লুটপাট শেষে সবার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।
রুমা শাখা সোনালী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়াই চিং মারমা বলেন, গতকাল সন্ত্রাসীরা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পকেট থেকে ভল্টের চাবি নিয়ে নেয়। চাবির সাথে কাছে থাকা টাকা ও মোবাইল ও ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে না পেরে ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
গেল বছর ৫ নভেম্বর মুনলাই পাড়াতে কেএনএফ সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সাথে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দু পক্ষে চারটি বিষয় নিয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত করা হয়। কিন্তু চারটি বিষয়ে মধ্যে দুটি বিষয়ে শর্ত ভঙ্গ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ সদস্যরা। এরপরই চলতি বছর ৫ মার্চ সকালে দ্বিতীয় বারের মতন কেএনএফ সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে আরো তিনটি দাবি জানিয়ে সাতটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু স্বাক্ষরিত এই সমাঝোতাটি বারবার ভঙ্গ করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা আরো পাহাড়ের উগ্রবাদী ছড়াচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সকল সম্প্রদায়ের মানুষ।
এদিকে বান্দরবানের এই প্রথম পাহাড়ের কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের লুটপাট ঘটনাটির পর পুরো জেলার জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাত উপজেলার প্রত্যেকটি ব্যাংকে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লেনদেন। তাছাড়া জেলা ও উপজেলার জুড়ে পুলিশ সেনাবাহিনী, র্যাব,এপিবিএমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে প্রশাসন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রুমা সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করে পুলিশ ও আনসারের কাছে থাকা অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। একই সাথে ব্যাংক ম্যানেজারকেও অপহরণ করে নিয়ে গেছে তারা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি আরো জানান, পাহাড়ে সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নাই এটা ভাবার কোন যুক্তি নাই। বরঞ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের সন্ত্রাস দমনে আরো বেশি সক্ষমতা রয়েছে। পাহাড়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তাছাড়া এই পাহাড়ি অঞ্চলে জঙ্গি বাদ দমনের সাফল্য অর্জন করতে পারব।