ভবন ধসে মৃতের সংখ্যা ৫২৮, হস্তান্তর ৪৩১

 ডেস্ক নিউজ

সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা মরদেহের সংখ্যা ৫’শ ছাড়িয়েছে। দুর্ঘটনার পর স্থাপন করা সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, দুর্ঘটনার দশম দিন শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৫২৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩১ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়েছে।

শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আরো ৫০ লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা।

এদের মধ্যে প্রমীলা, মামুন, জাহাঙ্গীর, তাহসান আহমেদের ও সর্বশেষ রাশিদার নাম জানা গেছে।
দুপুর পৌনে দুইটায় উদ্ধার করা ৩ মৃতের মধ্যে একজনের নাম রাশিদা। তার কাছে থাকা একটি সাদা কাগজ থেকে নাম ও আইডি(আইডি নং ১৪১৫২) নম্বর জানা যায়।

এদিকে দুপুর দেড়টায় উদ্ধার করা চার জনের মধ্যে একজন তাহসান আহমেদ। এসময় সেনাবাহিনী তার পকেট থেকে একটি কাগজ ও সেলফোন উদ্ধার করে। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় তার বাড়ি রাজশাহী জেলায়।

এছাড়া, সকাল ৬টার পর প্রমীলার মৃতদেহ উদ্ধার করার সময় তার সঙ্গে আইডি কার্ড পায় উদ্ধারকর্মীরা। আইডি কার্ডের তথ্য মতে,  প্রমীলা রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় সুইং এ সেকশনে কর্মরত ছিলেন।

জাহাঙ্গীরের বাড়ি গাজিপুরের জয়দেবপুরে। জাহাঙ্গীর ও মামুনের পকেটে সেলফোন পাওয়া গেছে।
শুক্রবার সকালে উদ্ধার করা পুরুষ লাশের মধ্যে বেশিরভাগের কাছে সেলফোন পাওয়া গেছে। তবে উদ্ধারকৃত নারী লাশগুলোর সঙ্গে সেলফোন পাওয়া যায়নি।

এদিকে ধসে পড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও পাঁচটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত পিস্তলটি ধসে যাওয়া ভবনের মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানার বলে ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা। ওই ভবনে আরো অস্ত্র থাকতে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা।
 
বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া সেনা সদস্যরা পিস্তলটি উদ্ধার করেন। পিস্তলটিতে পাঁচটি গুলিসহ একটি ম্যাগজিন ছিল। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
 
গুলিসহ পিস্তলটি ভবন ধসের ঘটনায় সাভার থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ভবনের ছাদের মূল অংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে কেটে ছাদ খণ্ড খণ্ড করে আলাদা করা হচ্ছে। জীবিত কিংবা মরদেহ উদ্ধারের জন্য সতর্কতার সঙ্গেই ভাঙ্গার কাজ চলছে।
তবে ভবন ধসের ৯ দিন পার হয়ে গেলে জীবিত থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে রানা প্লাজা ও অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে এখনো স্বজনেরা অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয় মানুষটির মৃতদেহ ফিরে পাওয়ার আশায়।

শুক্রবার উদ্ধার কাজ দেখতে যান প্রেসিডেন্ট আবুদল হামিদ এডভোকেট এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এদিকে রানা প্লাজার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প। ওয়াল্ট ডিজনি ঘোষণা করেছে তারা আর বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেবে না। অন্য আমদানীকারকেরাও পর্যবেক্ষণ করছে বিষয়টি। বাংলাদেশে তৈরী পোশাকের প্রধান আমদানীকারক যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ও ইউরোপীয় দেশগুলো বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। তারা বিষয়টির করণীয় নিয়ে ভাবছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা মালিকানাধীন নয়তলা বাণিজ্যিক ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে। এতে ব্যাপক প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে আড়াই হাজার শ্রমিককে। নবম পদাতিক ডিভিশনের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সে সময় ওই ভবনে থাকা ৫টি পোশাক কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। এর আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন