রামু থানায় মামলা করতে গিয়েও ফিরে এলেন শিপ্রা
আপত্তিকর ছবি প্রকাশের ঘটনায় দুই পুলিশ সুপারসহ (এসপি) দেড় শতাধিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কক্সবাজারের রামু থানায় মামলা করতে গিয়েও ফেরত এসেছেন নিহত অব. মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ।
তাঁর পক্ষ হয়ে হাইকোর্টে করা রিটের আদেশের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু।
উচ্চ আদালতে রিটের আদেশের ওপর ভিত্তি করে কাল বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) মামলা দায়েরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার রাতেও কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করতে গিয়ে ফেরত আসেন শিপ্রা।
ফেসবুকে শ্রিপার ব্যক্তিগত ছবি পোস্টকারী দুই এসপিসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রামু থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেন শিপ্রা।
বুধবার(১৯ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানার কাছাকাছি গিয়ে শিপ্রা দেবনাথের ফিরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অ্যাড. মাহবুবুল আলম টিপু এসব কথা বলেন।
এদিকে, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানিয়েছেন, থানায় জব্দ থাকা ডিভাইস থেকে শিপ্রার ব্যক্তিগত ছবি প্রচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে একই অভিযোগ নিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় গিয়েছিলেন শিপ্রা। এ সময় সিফাত ও অন্যরাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
আরো পড়ুন: শিপ্রার ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগত তথ্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই: রামু থানার ওসি
শিপ্রার আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে মামলা করতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নেয়নি। সদর থানার ওসি মো. খায়রুজ্জামান রামু থানা বা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মামলাটি ফিরিয়ে দেন।
সেই মতে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে রামু থানার উদ্দেশে রওনা হন তারা। কিন্তু ঢাকা থেকে জানানো হয়, উচ্চ আদালত শিপ্রার পক্ষে দায়ের করা রিটের আদেশ দিতে পারেন কাল। সেই আদেশ কী আসে, তা জানার অপেক্ষায় মামলার নথি রামু থানায় জমা না করে আবার কক্সবাজার ফিরে এসেছি আমরা।’
এদিকে, শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়া দুই পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে।
আজ বুধবার সকালে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেে রিটের শুনানি হয়েছে। কাল আদেশ দেবেন আদালত।
এ সময় আইনজীবীকে শিপ্রার অবস্থা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক জনস্বার্থে রিট করেন।
রিট আবেদনে শিপ্রাকে নিয়ে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট করায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্তেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আর্জি জানানো হয়।
পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা হলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান শেলী।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান গত ১৪ আগস্ট শিপ্রার ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তার নির্দোষ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এ রকম আরো ছবি আসার ব্যাপারেও ইঙ্গিত দেন তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের এসপি মিজানুর রহমান শেলীও অনুরূপ পোস্ট দিয়েছেন।
শিপ্রার কিছু ছবি পোস্ট করে তিনি তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার যথার্থতার পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন।
এই পোস্টগুলোতে যেসব মন্তব্য এসেছে, তার অনেকগুলোই ছিল শিপ্রার জন্য অবমাননাকর। অধীন কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকেও সেখানে এসপির পক্ষে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত কিছু ফেসবুক গ্রুপ, যেমন : ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’, ‘স্যালুট টু বিডি পুলিশ’ এ রকম কিছু গ্রুপেও ছবিগুলো পোস্ট করা হয়েছে।