রুমা-থানচি ভ্রমণে মানতে হবে যেসব শর্ত


প্রায় দীর্ঘ ৩৩ মাস পর নানা অবসান কাটিয়ে বান্দরবানের রুমা উপজেলার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে প্রশাসন। একই সাথে দীর্ঘ ১৩ মাস পর খুলেছে থানচি উপজেলাও। দুই উপজেলা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হলেও বেধে দেয়া হয়েছে শর্ত।
সেসব শর্ত পর্যটক কিংবা গাইডরা না মানলে নেয়া হবে আইনানুগত ব্যবস্থা। শর্ত বেধে দেয়া অনুযায়ী ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা। আর ঈদকে সামনে রেখে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় খুশি দুই উপজেলার মানুষ।
প্রশাসন জানিয়েছে, সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে দুই উপজেলার স্বল্প পরিসরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঐ দুইটি উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সেনাবাহিনীর সুপারিশে জেলা প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্থানীয়দের দাবির প্রতি বিবেচনা রেখে পর্যটন স্পটগুলোর মধ্য থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুই উপজেলা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও পর্যটকরা ভ্রমনের ক্ষেত্রে মানতে হবে গাইডের শর্ত ও দিক নির্দেশনা। ভ্রমণের যেসব শর্ত বেধে দিয়েছে সেটি হল- রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়া হয়ে বগালেক পর্যটন স্পট পর্যন্ত বেড়াতে পারবেন।
এসব কেন্দ্র বাহিরে গেলে প্রশাসনের মুখোমুখি হতে হবে গাইড ও পর্যটকেরা। একই ভাবে থানচি উপজেলার নদীর পথে তিন্দু ও যান্ত্রিক পথে তমা তুঙ্গি পর্যটন স্পট পর্যন্ত পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারবে।
গেল ২০২৪ সালে ৩ এপ্রিল রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির পর দিনদুপুরে থানচি উপজেলায় দুটি ব্যাংকে হানা দিয়ে টাকা ও অস্ত্র লুট করে্ নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা।
এরপর থেকে রুমা ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রশাসন। বগালেক, কেউক্রাডং, মুনলাই পাড়া, ডিম পাহাড়, তমাতুঙ্গী, নাফাকুমসহ আরো জনপ্রিয় পর্যটন স্পট নিঃস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
থমকে যায় উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের অর্থনৈতিক চাকা। পাহাড়ের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে পর্যটন শিল্পে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বেকারত্বসহ নানা সমস্যার বাড়তে থাকে শতাধিক পর্যটক গাইডের।
গতকাল বৃহস্পতিবার দীর্ঘ প্রতীক্ষা পর জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুমা ও থানচি উপজেলার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে প্রশাসন। পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াই খুশি পর্যটন শিল্পের জড়িত দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
দীর্ঘ রুমা উপজেলার ৩৩ মাস ও থানচি উপজেলা ১৫ মাস পর খুলে দেয়ায় আবারো পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হবে দুই উপজেলার ছোট্ট শহরটি। একই সাথে শঙ্খ নদীতে ছুটে চলা ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঢেং ঢেং শব্দে মুখরিত হবে জলস্রোত ও বনাঞ্চল।
আবারো দুই উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিক চাঁকা ঘুরিয়ে দাঁড়াবে প্রত্যাশা স্থানীয় আর দীর্ঘ বছরে ক্ষতি হওয়া অর্থনৈতিক ধীরে ধীরে পুষিয়ে নেয়ার আশ্বাস সেখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
রুমা বাজার ও থানচি বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পলাশ চৌধুরী ও সুচনা ত্রিপুরা জানান, দীর্ঘ বছর পর পর্যটক ভ্রমণ খুলে দেয়ায় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এখানকার জনসাধারণ মানুষ অর্থনীতি পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যববায়ী, গাড়ি চালক, নৌকা মাঝিসহ অনেকেই। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে দুই উপজেলার কয়েকহাজার মানুষ। নানা সমস্যা জর্জরিত মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হয়েছে অনেকেই।
ফলে পর্যটক খুলে দেয়ায় এই অঞ্চলে কৃষি পন্যে, আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ এলাকাবাসীর আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়নে এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রুমা ও থানচি পর্যটক গাইডের সাধারণ সম্পাদক সুমন দত্ত ও মামুনুর রশিদ বলেন,পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় গাইডের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় গাইডের অনান্য সদস্যরা পেশায় পরিবর্তন করে শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শুধু সীমিত পরিসরে নয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে দুই উপজেলার পুরো পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার জন্য প্রশাসনে প্রতি অনুরোধ জানান।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, গাইড ও স্থানীয়দের উপর বিবেচনা করে পরিক্ষামূলক ভাবে দুই উপজেলার পর্যটক ভ্রমণের প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর সেখানে শর্ত বেধে দেয়া হয়েছে।
গাইডরা পর্যটকদের নিয়ে রুমা থেকে মুনলাই পাড়া হয়ে বগালেক ও থানচি থেকে তমাতুঙ্গী ও তিন্দু পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে। এসব শর্ত বাইরে গেলে বা পর্যটকরা কথা না শুনলে বা কোন সমস্যা হলে গাইডরা প্রশাসনকে জানাতে হবে। গাইড এসব বিষয়ে না জানালে তাদের প্রতি আইনুগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শামীম আরা রিনি আরো বলেন, পরীক্ষামূলক ভাবে সীমিত পরিসরে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। যদি ভালো ফলাফল আসে তাহলে ওয়ার্কাউট করে অনান্য স্পট গুলো খুলে দেয়া যাবে। আর সামনে যদি পরিস্থিতি আরো উন্নতি দেখা গেলে পুরোটাই খুলে দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।