রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিচ্ছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট
পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে জাল- জালিয়াতি করে ভিনদেশী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে দিচ্ছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এতে জড়িত এলাকারই কয়েক শ্রেণির লোকজন। এর মধ্যে কতিপয় স্কুল শিক্ষক সিরাজুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন, কড়া নজরদারী তোয়াক্কা না করে শুধু টাকার বিনিময়ে শত শত রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশি বনে গেছে এমন অভিযোগ স্থানীয় গ্রামবাসীর।
সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের এক শ্রেণীর অসাধু প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের নিকট আত্বীয়-স্বজন পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধনের পাশাপাশি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংগ্রহ করে দিচ্ছে। পরবর্তিতে ভোটার হালনাগাদের সময় জোরপূর্বক তদবির চালিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে দিতে সহযোগিতা করে থাকে ওই সিন্ডিকেট। অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের অনুসারি বাড়ানোর জন্য এবং ভোট ব্যাংক তৈরির উদ্দেশ্যে এসব অপকর্মে পা দিয়ে থাকেন।
সরেজমিন ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোটার হালনাগাদের সময় কতিপয় শিক্ষক নামধারী সিরাজুল হক তথ্য হালনাগাদকারীদের উপর প্রভাব বিস্তার করে রোহিঙ্গাদেরকে ভোটার করানোর জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজু আমতলী এলাকার এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার কু-মানসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তদবিরে ব্যস্ত হয়ে থাকে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল গফুর জানান, একদিন সকালে রেজু আমতলী এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে সিরাজুল হকের অনুরোধে আমি একজনের ভোটার ফরমে স্বাক্ষর করি। পরবর্তিতে জানতে পারি সে রোহিঙ্গা নাগরিক। একই কথা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল কান্তি চাকমার।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে আমি তেমন এলাকার লোকজনকে চিনতাম না। সিরাজুল হকের সুপারিশে কয়েকজন লোকের ভোটার ফরমে যাছাইকারী হিসেবে স্বাক্ষর করে ছিলাম। এখন জানতে পেরেছি, তারা নাকি রোহিঙ্গা।
স্থানীয় চকিদার বদিউর রহমান সেও বলেন সিরাজুল হকের কারণে রোহিঙ্গারা এই ওয়ার্ডের ভোটার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এভাবে যদি রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার সুযোগ পায় তাহলে একদিন এ এলাকা রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাবে।
অভিযুক্ত কতিপয় শিক্ষক সিরাজুল হক বলেন, আমি যাচাই-বাছাইকারী ছিলাম না, এসম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। যারা এগুলো বলতেছে তারা আমার প্রতিপক্ষ৷
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নে ৪/৫ শতাধিক রোহিঙ্গা ভোটার রয়েছে। তারা কিভাবে ভোটার হয়েছে আমি জানিনা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবু জাফর সালেহ গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণত ভোটার নিবন্ধনের সময় নির্বাচন অফিসের বিশেষ কমিটির সভার সিদ্ধান্তক্রমে ভোটার প্রার্থীদের সংযুক্তকৃত কাগজপত্র যাছাই বাছাইয়ের মাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ জনপ্রতিনিধিদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।