অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে নারী পথশিশুরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
রাস্তায় থাকা ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুরা বড় হয়ে লিপ্ত হয় শ্রমজীবি পেশাসহ নানা কাজে। আবার অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে যায় বা খারপ জগতে চলে যায়। কিন্তু নারী পথশিশু বড় হয়ে কি হয়? এই সমাজের কিছু নোংরা মানুষ তাদেরকে জোর করে যৌন কর্মের সাথে লিপ্ত করে। আর তারা এই অপকর্মের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে। তারা যতই বড় হতে থাকে তাদের জীবন ততই অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। সাথে ধ্বংস হতে থাকে তাদের ভবিষ্যৎ।
এই অন্ধকার জগতে ধাবিত হওয়া নারী শিশুদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে শহরের খুরুশকুল রাস্তার মাথা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন কেন্দ্র’। যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ এই নারী পথশিশুদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে দেয়া হচ্ছে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং কারীগরি শিক্ষা। তাদেরকে শেখানো হচ্ছে জীবনের গুরুত্ব এবং টিকে থাকার কৌশল।
আর এই নারী পথশিশুদের ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে’ দিয়ে সহযোগিতা করছে পথশিশু কল্যাণ মূলক সংগঠন ‘নতুন জীবন’ নামে আরেকটি সংগঠন। এই সংগঠনের সদস্যরা রাস্থা থেকে ছিন্নমূল পথশিশু নারীদের নতুন জীবনের জন্য দিচ্ছে শেখ রাসেল পূর্নবাসন কেন্দ্রে।
এমনই দুই নারী পথশিশু হচ্ছে সুইটী আর বিউটি (ছদ্দ নাম)। তাদের বয়স ১৪ অথবা ১৫ বছর। গত এক মাস আগে রাতে শহরের লাল দিঘীর পাড় এলাকায় এই নারী শিশুদের ভাল জীবন-যাপন সর্ম্পকে বুঝায় ‘নতুন জীবন’ সংগঠনের সদস্যরা। পরে তাদের ইচ্ছায় ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুর্নবাসন কেন্দ্র’র উপ-পরিচালক জেসমিন আকতারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারা ওখানে সুন্দরবাবে জীবন যাপন করছে।
শুধু সুইটী আর বিউটি নয় এরও প্রায় ১ বছর আগে কিউটি (ছদ্দ নাম) নামে এক নারী পথশিশুকেও ওই প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। ওই সময় কিউটি’কে খুবই বিধ্বস্থ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। তাকে পাওয়ার আগের দিন রাতে মাদকাসক্ত কিছু লোক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মুখে ও গলায় ছুরিকাঘাত করে। আর ওই বিধ্বস্থ অবস্থায় তাকে পুর্নবাসন কেন্দ্রে দেওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসাও চলে। সে দীর্ঘদিন ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনবাসন কেন্দ্রে থেকে সেলাই কাজ শেখা থেকে শুরু করে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার কৌশল শিখে নেয়। সে এখন আলোকিত জীবন যাপন করছে।
বর্তমানে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে অবস্থানরত নারী পথশিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা খুবই ভাল আছে। আর কেউ তাদের উপর অত্যাচার করেনা। শীত, গরম আর বৃষ্টিতে রাস্তায় থাকতে যে কষ্ট হত, সেই সমস্যায় আর পড়তে হচ্ছেনা। তারা ভালমত খেতে-পড়তে পারছে। আর স্বপ্ন দেখছে সুন্দর জীবনের।
এ ব্যাপারে এডভোকেট মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, এই শিশুরা আমাদের সন্তানের মত। পরিস্থিতি’র কারণে তাদেরকে রাস্থায় থাকতে হচ্ছে। এই সমাজের কিছু নোংরা মানুষ তাদেরকে যৌন নির্যাচতন করছে। চালাচ্ছে শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের মত অন্যান্য সংগঠনগুলো যদি তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তাহলে তারা এইটি সুন্দর জীবন পাবে।
এ ব্যাপারে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষান ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের উপপতল্প পরিচাল জেসমিন আকতার, পথশিশুদের মধ্যে নারী শিশুরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে। তারা যতই বড় হয় ততই তাদের কাছে জীবনটা বিষন্ন হয়ে উঠে। আর এসব নারী শিশুদের আলোর পথে আনাই হচ্ছে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্রের কাজ। এসবে শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই কাজ থেকে শুরু করে নানা কারিগরি শিক্ষা ছাড়াও তাদেরকে বুঝানো হয় জীবনের গুরুত্ব সর্ম্পকে। আর শিখানো হয় জীবনে চলার পথে কিভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। এক কথায় তাদের অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে আনার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।