আগামী তিন মাসের মধ্যে বুয়েট ও চুয়েটের প্রকৌশলীদের দিয়ে সারা দেশে পোশাক কারখানাগুলোর ‘স্ট্রাকচারাল ডিজাইন’ পরীক্ষা করা হবে- বিজিএমইএ সভাপতি

শনি-রবি পোশাক কারখানা বন্ধ

বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভারে ভবন ধসে মানবিক বিপর্যয়ের পর আগামী তিন মাসের মধ্যে বুয়েট ও চুয়েটের প্রকৌশলীদের দিয়ে সারা দেশে পোশাক কারখানাগুলোর ‘স্ট্রাকচারাল ডিজাইন’ পরীক্ষা করা হবে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি জানিয়েছেন। একই সাথে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাংচুরের প্রেক্ষাপটে শনি ও রবিবার তৈরি পোশাক শিল্পের সব কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে এক যৌথ সংবাদে সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন। বিকেএমইএ সভাপতি কে এইচ সেলিম ওসমানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাভারে উদ্ধার কাজ ও আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা’ নিশ্চিত করার জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাক কারখানা আগামী দুই দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“আমরা আশা করছি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে রানা প্লাজার মালিক ও ওই ভবনে অবস্থিত পোশাক কারখানার মালিকরা অবিলম্বে নিজেদের আইনের কাছে সোপর্দ করবেন। বিজিএমইএ কখনও অন্যায়কে প্রশয় দেয় না। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সর্বাত্বক সহযোগিতা করবে।”

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রানা প্লাজার সব পোশাক কারখানার কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারের পাশাপাশি প্রয়োজনে বিজিএমইএও আহত শ্রমিকদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।

“নিহত শ্রমিকদের পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের চাকরি দেয়া হবে। পাশাপাশি আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা হবে।

তবে কবে কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে- সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। 

 

অন্যদের মধ্যে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, বিকেএমইএর সহ সভাপতি মো. হাতেম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ভবন ধসে হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ও  শুক্রবার গাজীপুরে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাপক বিক্ষোভ ও ভাংচুর চলে।

রাজধানীতেও বিভিন্ন  স্থানে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখায় এবং যানবাহন ভাংচুর করে। এই পরিস্থিতিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়। 

শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারই রানা প্লাজার পাঁচ পোশাক কারখানার সদস্যপদ স্থগিত করে বিজিএমইএ।

কারখানাগুলোর মধ্যে নিউ ওয়েভ বটমস ও নিউ ওয়েভ স্টাইলের মালিক মাহবুবুর রহমান তাপস ও বজলুস সামাদ আদনান। ফ্যানটম অ্যাপারেলস ও ট্যাকের মালিক মো. আমিনুল ইসলাম। আর ইথারটেক্সের মালিক মো. আনিসুর রহমান।

ধর্মঘট’

এদিকে রানা প্লাজা ও ওই ভবনের কারখানা মালিকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে  রোববার সারা দেশে ধর্মঘট ডেকেছে পোশাক শ্রমিকদের দশটি সংগঠন। 

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ আমরা আগামী ২৮ এপ্রিল দেশের সব পোশাক কারখানায় পুর্ণ দিবস ধর্মঘট পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তবে এ খাতের সংগঠনগুলোর আরেক মোর্চা ‘গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ ধর্মঘট কর্মসূচিকে সমর্থন দিচ্ছে না।

পরিষদের সমন্বয়কারী সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, “আমরা এ ধর্মঘটকে কোনভাবেই এ মুহুর্তে সমর্থন করি না।”

ঐক্য ফোরামের দাবিগুলো হচ্ছে- রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতিপূরন প্রদান, সারাদেশের কারখানা শ্রমিকদের অগ্রিম ৫০ ভাগ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত, কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত, কারখানা শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নিশ্চিত ও দেশব্যাপী গার্মেন্টস শ্রমিকদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন