ইসলাম ও রাসুল সা.-এর মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনে আমাদের জিহাদ করতে হবে: আল্লামা শফী

সফি

চট্টগ্রাম: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও বর্ষিয়ান আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী হেফাজতের উত্থাপিত ১৩ দফা অবিলম্বে মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল আমাদের উদ্দেশ্য নয়। জাতীয় সংসদ চলছে, এখনো সময় আছে, প্রধানমন্ত্রীকে বলছি ১৩ দফা সংসদে তোলেন।”

আল্লামা শফী বলেন, “ ইসলাম না থাকলে দুনিয়াতে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। ইসলাম ও রাসুল সা.-এর মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনে আমাদের জিহাদ করতে হবে। আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করে কেউ টিকতে পারবে না।”

শুক্রবার ঢাকা লংমার্চ মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবং আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। নগরীর ওয়াসা মোড়স্থ জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ‘শানে রেসালত মহাসম্মেলন’ নামে আয়োজিত এ মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের নেতারা আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল ও ১৩ দফা দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার সংকল্প ব্যক্ত করেন।
সম্মেলন শেষে ফেরার পথে চট্টগ্রামে হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সংগঠনের মহানগর নায়েবে আমির হাফেজ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ মহাসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব মওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, খেলাফত মজলিস প্রধান মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি আহমদ উল্লাহ, মুফতি মাহবুবুর রহমান, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজি ও মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

মহাসমাবেশে আল্লামা শফিসহ প্রায় বক্তা দৈনিক আমার দেশের কারারুদ্ধ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও প্রেসে তালা খুলে দিয়ে দৈনিকটি প্রকাশের বাধা অপসারণের দাবি জানান।

বক্তব্যে আল্লামা শফী আরো বলেন, “আল্লাহ ও রাসুল সা.কে যে দেশে মানবে না, অপমান করা হবে, সে দেশে কেন থাকবো? এটা মুসলমানদের দেশ, কম্যুনিস্টদের নয়। নাস্তিকেরা এদেশে থাকতে পারবে না। তারা অন্যদেশে চলে যাক। সারা পৃথিবী আল্লাহর। তারা যে দেশে চলে যাবে সেটাও আল্লাহর জায়গা। সুতরাং, দুনিয়ার কোথাও নয়, মাটির নিচে হবে তাদের স্থান। আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করে কেউ এদেশে থাকতে পারবে না।”

বক্তব্যের পর পর তিনি সাভার ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতে আল্লামা শফী সাভারে নিহতদের রুহের মাগফেরাত, আহতদের সুস্থতা ও নিহতদের পরিবারপরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একইসাথে তিনি বাংলাদেশকে হেফাজত, ৫ মে ঢাকা অবরোধ সফলকাম করতে, প্রধানমন্ত্রীকে ১৩ দফা মেনে নেয়ার সুমতি ফিরাতে আর নাস্তিকদের হেদায়তের জন্য দোয়া করেন।

মহাসমাবেশে সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, “সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে, ইসলামি শিক্ষার ওপর ক্রমাগত বাধা সৃষ্টি ও ইসলামবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এ সরকার নাস্তিকদের সরকারে পরিণত হয়েছে।”

হেফাজত পূর্ণ শক্তিতে ধাক্কা দিলে এ সরকার একমাসও ঠিকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় অন্যান্য বক্তারা হেফাজতের ১৩ দফা বিশেষ করে নারী সংক্রান্ত দফা নিয়ে নারী সমাজেকে সরকার ও একশ্রেণীর লোক মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করে বলেন, “হেফাজতের নারী নীতি বাস্তবায়ন হলে নারীদের আত্মসম্মান , মর্যাদা ও অধিকার বাড়বে। বরং যে দলের লোকেরা ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করে নারী সমাজকে কলঙ্কিত করে তাদের মুখে নারী অধিকার ও মর্যাদার কথা শোভা পায় না।”

কয়েকজন বক্তা হেফাজতের আন্দোলন ও কর্মসূচি নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মিথ্যাচারের সমালোচনা করে মিডিয়াকে সত্য তুলে ধরতে ও সরকারি প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহ্নত না হওয়ার আহ্বান জানান।

জুমার নামাজ বিরতি ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলা এ মহাসমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগরী ও পাশ্ববর্তী জেলা, উপজেলা থেকে কয়েক লাখ লোক অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশের ব্যাপ্তি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দান ছাপিয়ে চতুর্দিকের প্রায় অর্ধকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে বিপুল উপস্থিতির কারণে দুপুর থেকে নগরীর বহদ্দারহাট-আগ্রাবাদ সড়ক এবং কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে আলমাস সিনেমা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে শুক্রবার চট্টগ্রামের মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর বাসস্ট্যান্ডের কাছে তার গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন হেফাজত বিরোধী আলেমরা। একপর্যায়ে তা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়। পরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় না গিয়ে ফিরে যান আহমদ শফী। বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে মহাসমাবেশের কর্মসূচি শেষ করে হাটহাজারী মাদ্রাসায় যাচ্ছিলেন হেফাজত আমির আহমদ শফী। পথে বাস্ট্যান্ডের কাছে শেরে বাংলা শাহ মাজারের কাছে তার গাড়ি বহর আসতেই গতিরোধ করেন আহলে সুন্নাত সংগঠনের আলেমরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন