আমি আল্লাহ পাকের কাছে বিচার দিলাম: কক্সবাজার জেলা জজ

fec-image

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিন মঞ্জুর না হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টে আসেন কক্সবাজারের জেলা জজ মোহামদ ইসমাঈল।

বৃহস্পতিবার শুনানির নির্ধারিত দিনে (২০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আজ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে বের হলে সাংবাদিকরা তার বক্তব্য জানতে চান। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ পাকের কাছে বিচার দিলাম। যা করার আল্লাহ পাক করবেন। আল্লাহ পাক ভালো বোঝেন।’

এর আগে শুনানিতে জেলা জজকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপলো না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। জেনে শুনে আপনি ক্রাইম করেছেন।

শুনানিতে জেলা জজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত।

এ পর্যায়ে হাইকোর্ট জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডেকে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন জেলা জজ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বলেন, ভুলে এটি হয়েছে।

তখন আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে-বুঝে ক্রাইম করেছেন।

এসময় তার আইনজীবীরা আবারও ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাচ্ছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়।

পরে আদেশের জন্য ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

এর আগে ২১ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

আবেদনকারীর তথ্য থেকে জানা যায়, জমির দখল নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।

এ মামলায় আসামিরা আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করলে ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ অনুসারে ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালত ৯ আসামিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর বিরুদ্ধে সেদিনই আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন দেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন খোদেস্তা।

আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন বলেন, জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদনের সঙ্গে হাকিম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্যান্য কাগজপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি বা প্রত্যয়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। তারপরও জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেন জেলা জজ। অথচ নয় আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না। এর পর ওই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন মামলার বাদী রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম (রিনা)।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আমি আল্লাহ পাকের কাছে বিচার দিলাম, কক্সবাজার জেলা জজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন