উখিয়ায় সুপারীর বাম্পার ফলন: যাচ্ছে সারাদেশে
উখিয়ায় অর্থকারী ফলন সুপারীর বাম্পার ফলনে বাগান মালিকদের মুখে হাসির ঝিলিক উঠেছে। দেশে বয়ে যাওয়া ঘুর্নিঝড় বুলবুলসহ প্রাকৃতিক নানান দুর্যোগকে জয় করে উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে উৎপাদিত সুপারী নজর কেড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটক ও সুপারী বেপারীদের।
বিশেষ করে উখিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালংয়ে সুপারী উৎপাদন বেশী হয় বলে এ এলাকাকে সোনালী ফসল সুপারী পাড়া বলেও আখ্যায়িত করে থাকে। এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকার সঙ্গে সুপারীর ভূমিকা থেকে কথাটির প্রচলন বলে ধারণা করা হয়। এই সুপারীর রয়েছে অর্থনৈতিক মূল্য। সারিসারি সুপারী বাগানের গাছ পর্যটন নগরী কক্সবাজার এর উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকতকে করেছে আকর্ষনীয়।
মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে ইনানী আসার পথিমধ্যে রাস্তার উভয় পাশের মনোরম সৌন্দর্যের প্রতিক হিসেবে দাঁড়িয়ে সারি সারি সুপারী বাগানের দৃশ্য পর্যটক নগরীর আকর্ষন দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের মন মানষিকতার পাশাপাশি সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্নভাবে পরিবর্তন এলেও এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের সঙ্গে সুপারীর সম্পর্ক আজও গভীর।
উখিয়া উপজেলার সাপ্তাহিক বাজারগুলোতে জমজমাট সুপারী বাজার বসলেও জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া বাজারের কথা ভিন্ন।
এখানে সপ্তাহের প্রতি রবি ও বুধবার এ বাজারে জন্য সুপারীর হাট বসে থাকে। বিভিন্ন আকার ও জাতের সুপারী মেলে এখানে। ছোট বড় একেকটি জাত একেক গুনে গুণান্বিত। বাজারে বেশি দেখা যায়, স্থানীয় জাতের সুপারী।
ব্যবসায়ীরা জানান, উখিয়া-কোর্টবাজার, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে সোনার পাড়া বাজার হওয়ায় যোগাযোগ সুবিধার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাটের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সুপারী কিনে নিয়ে যান। এসব সুপারী তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। এখানে বড় আকারের ১ কন সুপারী ৬ হাজার টাকা মাঝারী ৫ হাজার ও ছোট আকারের সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
উল্লেখ্য, ৮০ টি সুপারীতে ১ পন এবং ১৬ পনে ১ কন হিসেবে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন। ভালো দামের আশায় বিক্রেতারা ইনানী সোনার পাড়ার সুপারী বাজারে নিয়ে আসে তাদের উৎপাদিত সুপারী।
প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ কোটি টাকার সুপারী বিক্রি হয় এই হাটে। প্রচুর জনসমাগমের কারণে সোনার পাড়া বাজারের অন্যান্য ব্যবসারও উন্নতি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে এসে পাথুরে গাঁথা ইনানী মনোরম সমুদ্র সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে হোটেল-মোটেলে অবস্থান নেয়।
যোগাযোগ সুবিধার কারণেও প্রচুর সুপারীর সমাগত হওয়ায় তারা এ বাজার থেকে সুপারী ক্রয় করেন।, প্রতি বাজারের তারিখে সোনার পাড়া সুপারী হাট থেকে ২০-২৫ লাখ টাকার সুপারী ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভাগীয় শহর সমূহে চলে যায়। ভালো দাম পাওয়ায় বিক্রেতাদের কাছেও বেশি সুপারী জড়ো হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে বাজারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সোনার পাড়া এলাকার মৃত ফজল করিমের ছেলে আমানত উল্লাহ বলেন, আমি ২০ বছর থেকে সুপারী গাছ রোপন করি। পরিচর্যা করে কয়েক বছরের ব্যবধানে সুপারী বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা বাড়তি আয় করি।
সোনারপাড়া গ্রামের নুরুল আবছার বলেন, যোগাযোগ সুবিধা ও প্রাচীন বাজার হিসাবে সোনার পাড়ার ব্যাপক নাম ডাক রয়েছে। ফলে সুপারী ব্যবসার সঙ্গে অন্যান্য ব্যবসাসহ হ্যাচারী শিল্পও এখানে জমজমাট।
অন্য দিকে বিভিন্ন যানবাহনে করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা ধরনের ক্রেতা বিক্রেতারা আসেন এ সোনার পাড়া সুপারীর হাটে। কেউ আসেন বাজার দর দেখতে, কেউ আসেন সুপারী বিক্রি করতে। আবার ব্যবসায়ীরা আসেন সুপারী সংগ্রহ করতে। তাই প্রতি রবি ও বুধবার সোনার পাড়ার এই হাটে জমে উঠে বেচা কেনা। বিপুল অর্থকরি সুপারী সোনার পাড়া অঞ্চলে শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুলসহ যেকোন ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। এ সব সুপারি বিক্রি করে লোকেরা অধিক আয় করতে পারবে।