একাই দুই ছিনতাইকারী ধরে পুলিশে দিলেন সাংবাদিক

fec-image

জীবন বাজি রেখে একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরে পুলিশে তুলে দিয়েছেন ওমর ফারুক হিরু নামের এক সাংবাদিক। এতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন এক পথচারী।

রোববার (২১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার শহরের পৌরসভার সংলগ্ন কস্তুরী হোটেলের পাশে। হিরু জিটিভি’র কক্সবাজার প্রতিনিধি এবং দৈনিক কক্সবাজারের স্টাফ রিপোর্টার। সাংবাদিকের এই সাহসী ভূমিকায় প্রশংসা করেছেন পুলিশ ও সচেতন মহল।

রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কস্তুরী হোটেলের পূর্বপাশে থানার পিছন রোড়ের মুখে তিনজন ছিনতাইকারী একজন পথচারীকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ওই সময় প্রধান সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি নজরে পড়ে সাংবাদিক ওমর ফারুক হিরুর। পরে তিনি মোটরসাইকেল থেকে নেমে ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধ করেন। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি করে দুই ছিনতাইকারীকে আটকে রাখতে সক্ষম হন তিনি। তবে ওই সময় এক ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। পরে ডিএসবি’র এক পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি ছিনতাইকারীদের সদর মডেল থানার হাতে তুলে দেন।

আটক দুই ছিনতাইকারী হলেন- শহরের চরপাড়া এলাকার বাতেল ও ঘোনারপাড়া এলাকার বাবু। এরমধ্যে বাতেল একাধিকবার কারাভোগও করেন। গত ৫দিন আগে ছিনতাইয়ের মামলায় কারাভোগ করে সে জামিনে বেরিয়ে আসে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার জানান, ওই সাংবাদিক একাই ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধ করেছেন এবং দু’জনকে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের সবার হাতে ধারালো ছুরি ছিল। ওই সাংবাদিক তৎক্ষনিক উপস্থিত না হলে পথচারীকে ছুরিকাঘাত করতো ছিনতাইকারীরা। ছুরিকাঘাত করার মুহুর্তেই তিনি ওই পথচারীকে বাঁচিয়েছেন। তার এই সাহসী পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়।

কক্সবাজার ডিএসবি’র পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক জানান, প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের সময় কেউ ফিরেও তাকায়নি। কিন্তু সাংবাদিক ওমর ফারুক হিরু দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবল থেকে পথচারীকে রক্ষা করেছেন। পাশাপাশি দু’জন ছিনতাইকারীকে একাই আটকে রেখেছেন। পরে তিনি (পুলিশ কর্মকর্তা) থানায় ফোন করে ছিনতাইকারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।

সাংবাদিক ওমর ফারুক হিরু জানান, ‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি আমার নজরে পড়ে। পরে তাৎক্ষণিক এগিয়ে গিয়ে ছিনতাইয়ের হাত থেকে পথচারীকে রক্ষা করি। পাশাপাশি দুইজন ছিনতাইকারীকে আটকে রাখতে সক্ষম হয়। তবে আশপাশের কেউ এগিয়ে না আসায় আরেকজন ছিনতাইকারীকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। পরে ডিএসবি পুলিশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকের সহায়তায় তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, তারা তিনজনই পেশাদার ছিনতাইকারী। চক্রটি টমটম (ইজিবাইক) নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই করে বেড়ায়।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বলেন, সবাই দেখেছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে যাননি। হিরু একাই প্রতিরোধ করে তাদেরকে আটকে রেখেছেন এবং পথচারীকে রক্ষা করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। সমাজের অন্যায়-অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের পাশাপাশি তার (সাংবাদিক হিরু) মত সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল বলেন, ‘একজন সাংবাদিক শুধু পেশাগত নয়, মানুষ হিসেবে যদি সৎ থাকেন তাহলে সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেন। হিরু তারই উদাহরণ। কারণ সাংবাদিকের বাইরে সে একজন সমাজের নাগরিক। সমাজের প্রতি সে তার দায়িত্ববোধ প্রকাশ করেছেন। তবে সবাই এটা করে না। আমাদের উচিত হিরুকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে সমাজের কল্যাণে এগিয়ে আসা।’

তিনি আরও বলেন, ‘হিরু সব সময় ভাল কাজ করে। সে দীর্ঘদিন ধরে পথশিশুদের অধিকার আদায়ের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছে। আমাদের উচিত তার সকল মহৎ কাজে সঙ্গী হওয়া।’

উল্লেখ্য, সাংবাদিক ওমর ফারুক হিরু সাংবাদিকতার পাশাপাশি মানবতার কল্যাণে কাজ করেন। কক্সবাজার শহরের পথশিশুদের কল্যাণমূলক সংগঠন নতুন জীবনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ওমর ফারুক হিরু, ছিনতাইকারী, সাংবাদিক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন