কক্সবাজারের দুটি শরণার্থী শিবিরে ৪২ হাজার শিশুর জন্ম : জনসংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে
আবদুল্লাহ নয়ন:
জেলার উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী গুলোতে অপরিকল্পিত এবং মাত্রাতিরিক্ত জন্মহারের আশংকাজনকহারে বাড়ছে জনসংখ্যা। এ দুটি শিবিরে ইতোমধ্যে ৪২ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। অব্যাহত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে সরকারের এমডিজি অর্জনেও ব্যর্থ হওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, উখিয়ার কুতুপালং পাহাড়ী এলাকা ৪ বর্গ মাইলের মধ্যে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মিলিয়ে এক লাখের উপরে রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। অত্যন্ত স্যাতসেতে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এদের বসবাস। এখানে নিরাপদ স্বাস্থ্য এবং মাতৃস্বাস্থ্যের কোন বালাই নেই। এ পরিবেশে থেকেও রোহিঙ্গারা অধিক সন্তান নিচ্ছে। অধিক সন্তানের সংখ্যা মুখে না বললেও তাতে তারা খুব বেশি অনুতপ্ত নয়। স্বভাবসুলভ ভাবেই তারা অধিক সন্তান নেয়ার কথা জানান।
সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সুত্র জানিছেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিবার প্রতি সন্তানের সংখ্যা গড়ে ৬টি। কুতুপালং এবং নয়াপাড়ায় অবস্থিত দুটি ক্যাম্পে বর্তমানে ২৯ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। যেখানে প্রতি মাসেই জন্ম নিচ্ছে ৬০ জন শিশু। ৯১ সালের পর থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ক্যাম্প গুলোতে ৪২ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত অন্য দুটি অনিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোতে জন্ম হার আরো বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে তা আরো উপরে। এক্যাম্প দুটো’তে বর্তমানে ৯০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
নিবন্ধিত ক্যাম্প দুটি রোহিঙ্গাদের পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় সরকারী-বেসরকারী কর্মীরা কাজ করলেও অনিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোতে এসব বিষয়ে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। তাই রোহিঙ্গা পরিবার গুলোতে অধিক সন্তান নেয়ার প্রবণতা যেন থেমে নেই। রোহিঙ্গাদের মাঝে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জেলার মূল জনস্রোতেও এর প্রভাব ফেলছে আশংকা জনকহারে।
আরটিএম এর ক্যাম্প কর্মকর্তা নাছরিন আকতার মনিকা জানান, তবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিবার পরিকল্পনা কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা মনে করেন রোহিঙ্গারা ছোট এবং পরিকল্পিত পরিবার সম্পর্কে এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতন হচ্ছে।
জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা: দিপক তালুকদার জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অধিক সন্তান নেয়ার প্রবণতা দীর্ঘকাল থেকেই। এখানকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে এর প্রভাব পড়ছে। অধিক সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক গোড়ামী এখনো কাজ করছে বলে স্বীকার করেন কর্মকর্তারা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে না পারলে দেশের মূল জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারে যেমন এর প্রভাব পড়বে। তেমনি ২০১৫ সালের মধ্যে সরকারের এমডিজি অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে।