কক্সবাজারে উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে জনগণ

fec-image

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি থেমে নেই। উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। বৃষ্টি না হলেও শহরজুড়ে জলাবদ্ধতায় জনজীবন অতিষ্ঠ। শেষ নেই দুর্ভোগের। ভোগান্তি থেকে কখন নিস্তার মিলে, তাও অজানা।

কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত কাদা, জলাবদ্ধতায় জনজীবন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচলে মুশকিল হয়ে পড়েছে।

এক সময়ের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন থাকা জনগুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কটি প্রশস্তকরণ প্রকল্প হাতে নেয় ২০১৬ সালে যাত্রা হওয়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাসস্ট্যান্ড)’ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ৪ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে একশ ৮২ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩০৮ দশমিক ৭৮৫ টাকা। সড়ক নির্মাণ শেষে সৌন্দর্য্য বর্ধণ প্রকল্পসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে আরও ৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের নতুন অবয়ব দিতে সরকার ব্যয় করছে ২৫৮ কেটি ৮২ লাখ টাকা।

২০১৯ সালের ১৬ জুলাইয়ে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করে কউক। দু’ভাগে বিভক্ত প্রকল্পটিতে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই) এবং তাহের ব্রাদার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। এনডিই অনুমতি পেয়েছে ‘হাশেমিয়া মাদ্রাসা হতে হলিডে মোড়’ ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার কাজের।

দরপত্রের কার্যাদেশ অনুসারে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু গত এক বছরে এখনো ড্রেনের কাজই শেষ করতে পারেনি কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ সড়কে একসঙ্গে ড্রেনের কাজ শুরু করলেও হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে মন্থরগতিতে কাজ চলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খোঁড়া অংশ সংস্কার করার আগে নতুন জায়গায় খুঁড়াখুঁড়ি চলছে প্রতিনিয়ত। ফলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে জনদুর্ভোগ, ঘটছে দুর্ঘটনাও। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোক দেখানো কাজ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বলছে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে বার বার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

কউকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের জুলাই মাসে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা তাদের। আর তাহের ব্রাদার্স পেয়েছে প্রকল্পের ‘হাশেমিয়া মাদ্রাসা হতে বাসস্ট্যান্ড’ ২ দশমিক ২১০ কিলোমিটার সড়কের কাজ। তারাও কাজ বুঝিয়ে দেবে একই সময়ে।

কিন্তু ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে শুরু হওয়া কাজের ১৫ মাস অতিক্রম হলেও এখনো ড্রেইন তৈরির কাজও সমাপ্ত করতে পারেনি প্রতিষ্ঠান দুটি। উল্টো পরিকল্পনাহীন খোঁড়াখুঁড়ির ফলে শহরের অভ্যন্তরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আদালত ও সরকারি দপ্তরবেষ্টিত এলাকা হিসেবে সবচেয়ে কাহিল অবস্থা ‘হাশেমিয়া মাদ্রাসা হতে হলিডে মোড়’ সড়ক এলাকায়। কিছু কিছু স্থানে হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে ড্রেনের কাজ করা হচ্ছে। কচ্ছপগতির কাজে ভোগান্তি বেড়েছে পৌরবাসী ও জেলা প্রশাসন অফিসে আসা সেবা প্রার্থীদের। ঘটছে দুর্ঘটনাও। সবচেয়ে বেশি ভেগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রোগী, গর্ভবতীরা।

দেখা যায়, প্রায় সব স্থানে ড্রেনের জন্য মাটি খুঁড়ে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিউ মার্কেটের পর থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের চেয়ে বেশি এলাকায় খুঁড়ে রাখা ড্রেনের কাজ করছেন নামে মাত্র কয়েকজন শ্রমিক। অনেকাংশে বেঁধে রাখা লোহাগুলো উন্মূখ হয়ে আছে। সপ্তাহ থেকে পক্ষকাল এভাবে পড়ে আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ী ও পথচারিরা। একারণে সড়কে হাঁটা-চলাও দুরূহ হয়ে পড়ছে। বিকল্প পথ না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে সড়কে চলতে গিয়ে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।

টমটম চালক আমান উল্লাহ বলেন, গেল এক বছরে তিনবার গাড়ির স্প্রিং সেট বদলাতে হয়েছে। যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পেটের দায় না থাকলে ঘর থেকে বের হতাম না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যেভাবে সড়কের কাজ হচ্ছে, তাতে মনে হয় শুধু ড্রেনের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরো একবছর।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রুমালিয়ার ছড়ার আরিফা আকতার নামের রোগীর অভিভাবক বলেন, আমার বাসা থেকে হাসপাতালের দূরত্ব ৫০০ গজ। নরমালি হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগার কথা ১৫ মিনিট। কিন্তু অসুস্থ বোনকে নিয়ে বাসা থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এ অবস্থায় সংকটাপন্ন রোগী হলে পথেই মৃত্যু হতো।

এ ভোগান্তির পেছনে পৌরসভা ও কউকের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছে সচেতন মহল। তাদের মতে, যেসময়ে প্রধান সড়কের কাজ শুরু হয়েছে সেই সময়ে শহরের বিভিন্ন উপ-সড়কের কাজও আরম্ভ করে পৌরসভা। একইসঙ্গে প্রধান ও উপসড়ক চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় দূর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ও প্রধান সড়ক প্রসস্তকরণ প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্ণেল মো. খিজির খান বলেন, কার্যাদেশ অনুসারে কাজ শেষ হতে সময় থাকলেও মানুষের ভোগান্তি দেখে দ্রুত কাজ শেষ করতে বার বার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। প্রায় জায়গায় খোঁড়া কাজগুলো দ্রুত সমাপ্ত না করায় অপরিকল্পিত কাজের অভিযোগ প্রায়শই আসছে। কাজ বুঝে না দেওয়া পর্যন্ত এর দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন