কুরুকপাতা ইউনিয়নে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

fec-image

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

শুক্রবার (১০ জুন) দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থল কুরুকপাতা ইউনিয়নের আওয়ায় ম্রো কার্বারী পাড়ায় গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কুরুকপাতা ইউনিয়নের ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে। গত দু’দিনে চারটি পাড়া পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য বিভাগ ২৫ জন আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। আক্রান্ত সকলেই সুস্থ হয়েছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার কুরুকপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় খাবার পানির বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। খবর পেয়ে আলীকদম জোনের সেনা সদস্যরা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক টিম দুর্গম এলাকায় গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।

শুক্রবার (১০ জুন দুপুরে সরেজমিন তথ্যানুন্ধানকালে কুরুকপাতা বাজারে সেনা জোনের সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে দেখা গেছে। এ সময় সেনা সদস্যরা স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি লোকজনকে সেনাবাহিনীর মেডিকেল চিকিৎসা টিম তাদের পাশে সর্বক্ষণ থাকবে মর্মে আশ্বস্থ করতে দেখা গেছে।

বুধবার থেকে আলীকদম সেনা জোনের সদস্যরা দুর্গত ম্রো পল্লী পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করে চলেছে। দুর্গত পাড়াসমুহ সেনা নজরদারীতে রয়েছে বলে সেনাসূত্রে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতির খবর পেয়ে স্থানীয় ৪নং ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তার পিতা ডায়রিয়াজনিত কারণে মারা যান। গত ৫ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানীয় আরো একজন মারা যায়।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত তিনদিনে কোন ডায়রিয়া রোগী মারা যায়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী।

তিনি জানান, গত ৫ জুন ১ম বার ডায়রিয়া দেখা দেয় ম্রো পল্লীতে। গত বৃহস্পতিবার ডায়রিয়া রোগীর আক্রান্ত বেড়েছে জানতে পারলে সেখানে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়।

কুরুকপাতা ইউনিয়নে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতির খবরে গত বৃহস্পতিবার কুরুকপাতা বাজার পার্শ্ববর্তী দুর্গত পাড়া পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহরুবা ইসলাম। এ সময় তিনি সেখানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

সেনাসূত্রে জানা গেছে, জোনের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কুরুকপাতা সেনা ক্যাম্পসহ দুর্গমে অবস্থিত সেনা ক্যাম্প থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

শুক্রবার কুরুকপাতা বাজার, আওয়াই ম্রো কার্বারী পাড়ায় সরেজমিন পরিদর্শন করে পরিস্থিতি স্থিতিশীল দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমরা মাতামুহুরী নদীর পানি খাই। এ কারণে পানিতে বিষক্রিয়া হতে পারে।

কুরুকপাতা বাজার এলাকার বাসিন্দা দুদু মিয়া বলেন, আমরা মাতামুহুরী নদীর বালুর চরে গর্ত খনন করে পানি খাই।

স্থানীয় ম্রো যুবক সোলেমান জানান, ইদানীং পাহাড়ের জুমচাষ একধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কীটনাশক জুমক্ষেতে ফসল বোনার আগে আগাছা ও ঘাস মেরে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। নদী-খাল-ঝিরি তীরবর্তী পাহাড়ে এ কীটনাশক ছিটানোর পর বৃষ্টির পানিতে তা ধুয়ে মাতামুহুরী নদীতে আসে। এ সময় পাহাড়ের বিভিন্ন পাড়া-পল্লীতে পানিবাহিত রোগ হিসেবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা বীরেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, তাদেরকে এর আগে স্বাস্থ্য বিভাগ কিংবা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়নি। এখনো পর্যন্ত তাদের কাছে এ জাতীয় পানি বিশুদ্ধকরণের কোন ওষুধ নেই।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা শুক্রবার বিকেলে বলেন, কুরুকপাতা ইউনিয়নে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গত ৫ তারিখ থেকে নিয়মিত মনিটরিং এর অংশ হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীরা এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ডাক্তার বেলাল উদ্দিন আহমেদ কুরুকপাতা এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। সে সময় কোন ডায়রিয়া রোগীর খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, গত বুধবার দিনগত রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ডায়রিয়া রোগী বাড়ার খবর দেন। এরপর থেকে সেখানে মেডিকেল টিম কাজ করছে। অবনতিশীল কোন খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন