খাগড়াছড়িতে নেই আইসিইউ, সেবা বঞ্চিত পাহাড়ের মানুষ
আট লাখের মানুষের জেলা খাগড়াছড়িতে। নেই কোন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ। আইসিইউ সংকটে করোনা আক্রান্ত কোন মুর্মূষ রোগীকে জীবন বাঁচাতে পাড়ি দিতে ১২০ কিলোমিটারের দূরের চট্টগ্রামে। সেখানেও সংকট থাকায় আইসিইউ মেলার কোন নিশ্চিয়তা নেই।
আইসিইউ এর অভাবে মারা যাচ্ছে রোগীরা। করোনা মোকাবেলায় জেলা পর্যায়ে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপনের দাবি জানিয়েছে জেলাবাসী। সিভিল সার্জন বলছে আইসিইউ স্থাপন এখন সময়ের দাবি। একই অবস্থা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য এলাকার।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এর তথ্য অনুযায়ী,‘ জেলায় দিন দিন বাড়ছে করোনার রোগী। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে।
তবে করোনা আক্রান্ত মুর্মূষ রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য কোন আইসিইউ সুবিধা নেই। এতে করোনা আক্রান্ত দের মাঝে উদ্বেগ বেড়েছে। এতে আক্রান্ত রোগীরা মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে।
করোনা আতঙ্কে থাকা মানুষের মাঝে আইসিইউ সংকট আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর অবনতি হলে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। এতে পাড়ি হবে ১২০ কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পর্যন্ত যাওয়ায় আগেই রোগীর প্রাণ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
তবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আইসিইউ পাওয়ার কোন নিশ্চিয়তা নেই। তাই জেলায় দ্রুত সময়ে আইসিইউ স্থাপনের দাবি জানান।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দা জীবন চৌধুরী জানান ,‘ এখানে এত মানুষের বসবাস । দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্ত এখানে নূন্যতম সুবিধা নেই। আইসিইউ না থাকায় রোগীর প্রানহাণির শঙ্কা রয়েছে। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে আসাও অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। সেখানে চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব না ।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মী জনপ্রিয় চাকমা জানান, এখানে দুর্গম এলাকার মানুষ অনেক পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে আসে। এসব প্রান্তিক মানুষের পক্ষে চট্টগ্রাম বা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব না । তাই জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করতে হবে।
জেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হলেও বরাবরই অবহেলিত স্বাস্থ্য খাত। এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে সচেতন নাগরিকরা। জেলা ,রেড ক্রিসেট এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিন মজুমদার জানান ‘জেলায় আইসিইউ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাণ হারানোর শঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রামের গিয়ে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না । যেতে যেতে পথে রোগী মারা যাবে। চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে ৩-৪ ঘন্টা। ’
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল এর আবাসিক চিকিৎসক পুর্ণ বিকাশ চাকমা, ‘আইসিইউ না থাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীকে বাঁচাতে পারেনি। কিছুদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ।পরদিন তিনি মারা গেছে। এসময়ে মুর্মূষ রোগীদের অন্য জেলায় রেফার করেও কোন লাভ হয় না । রোগীর মারার যাওয়ার শঙ্কা বেশী।
এখান থেকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয় কিন্তু রোগী এই লম্বা পথ পাড়ি দিতে দিতে মারা যওায়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়ও চট্টগ্রামেও প্রচুর রোগী সেখানে গিয়েও আইসিইউ পাওয়ার শঙ্কা নেই। তার দাবি এখানে আইসিইউ থাকলে রোগীদের সেবা দেয়া যেত।
জেলায় আইসিইউ স্থাপন জরুরি বলে মনে করেছে জেলা সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি দাশ। তিনি জানান, ‘জেলায় যারা করোনায় মুমূর্ষ অবস্থা তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আইসিইউ ,ভেন্টিলেটর না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। করোনার প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে সেটি মোকাবেলায় জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি।’