প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে

খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের শোভাযাত্রা, প্রতিবাদী নৃত্য ও সমাবেশ

fec-image

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, প্রতিবাদী নৃত্য ও সমাবেশ করেছে নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

বুধবার (৮ মার্চ) সকাল ৯টার সময় খাগড়াছড়ি চেঙ্গী স্কয়ারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আগে খাগড়াছড়ি উপজেলা মাঠ থেকে ২৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে অবস্থান নেয়।

এছাড়াও রাঙামাটি রোডের চেঙ্গী ব্রিজ থেকে একটি মিছিল এবং দীঘিনালা রোডের নারিকেল বাগান থেকে একটি মিছিল চেঙ্গী স্কয়ার মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৬শ’ জনের অধিক নারী ও ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে এ যাবত পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায় করতে গিয়ে যারা অপহরণ, খুন, গুমের শিকার হয়েছেন এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করেছেন তাদের প্রতীকী হিসেবে সাংস্কৃতিক স্কোয়াড প্রতিবাদী নৃত্য পরিবেশন করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন হিল জউইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য এন্টি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান। এছাড়া সমাবেশে এসে সংহতি জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম ধানসিড়ি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা মুন্নি ধর।

নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান তার বক্তব্যে বলেন, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের জন্য পুরুষদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে চালিয়ে যাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ওপর যৌন আক্রমণ আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের মধ্যে ধর্ষণ অকল্পনীয়, পাহাড়িদের ভাষায় ধর্ষণের প্রতিশব্দও নেই। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোনো সামাজিক বা নৈতিক সমস্যা নয়। এটি একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনিক লোকেরা ভোট জালিয়াতি, ঘুষ, দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচারসহ ইত্যাদি কুকর্মে জড়িত।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন চলছে। প্রতিনিয়ত ধরপাকড়, ঘর তল্লাশি, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, ভূমি বেদখল, পরিবেশ ধ্বংসসহ নারী ধর্ষণ চালানো হচ্ছে। তিনি নারী ধর্ষণ ঘটনার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬ জন নারী শিশু যৌননিপীড়নসহ সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ১ জন, ধর্ষণের শিকার ৫ জন,ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ৬ জন। এছাড়াও চলতি বছরে বান্দরবানে লামায়, মাটিরাঙ্গায়, পানছড়িসহ ৬ জন নারী ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও খুনের শিকার হয়েছেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান এবং নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের অন্যায় দমন-পীড়ন, জুলুম বন্ধ করে নিপীড়নমুক্ত সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান।

সমাবেশের পর চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে আবারো মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মহাজন পাড়া ঘুরে এসে স্বনির্ভরে গিযে শেষ হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন