খাগড়াছড়িতে ৮গণসংগঠনের জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত

8 orgnization convention1

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
বাঁচার তাগিদে এক হোন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন এই আহ্বানে এবং ‘বংশপরম্পরার ভূমি ও বাস্তুভিটা রক্ষা, স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার, জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিতে এবং নারী নির্যাতন ও অব্যাহত দমন-পীড়নের’ প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে ৮ গণসংগঠন (গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড)-এর জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙখিয়াস্থ সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে ৮ সংগঠনের সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাইকেল চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎ¯œা রাণী চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক শান্তি প্রভা চাকমা, প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডের সদস্য জ্ঞানকীর্তি চাকমা ও নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের সভাপতি ও পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা। এছাড়া কনভেনশনে ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা, হেডম্যান এসোসিয়েশনের খাগড়াছড়ি জেলার সহ সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, বিশিষ্ট মুরুব্বী কিরণ মারমা, সমাজ কর্মী অনুপম চাকমা, নিপুল কান্তি চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কনভেনশনে তিন পার্বত্য জেলা, ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে তিন শতাধিক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
কনভেনশনের অনুষ্ঠান শুরুতে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ২ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

কনভেনশনে রাজনৈতিক প্রস্তাব পাঠ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা। এরপর উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাবটি হাত উচিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করা হয়। এছাড়া কনভেনশনে ১১ দফা দাবিও গৃহীত হয়েছে।

কনভেনশনে বক্তারা বলেন, একতরফাভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ফ্যাসিবাদী নীতি অব্যাহত রেখেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে বাঙালি বানিয়েছে।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দীঘিনালার বাবুছড়ায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের মাধ্যমে পাহাড়িদের নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ এবং তদেকমারা কিজিং ও সাজেকে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন ও ভাবনা কেন্দ্র নির্মাণে সরকার বাধা দিচ্ছে। অন্যদিকে বান্দরবানের রুমা, নাইক্ষ্যংছড়ি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি উচ্ছেদের নানা চক্রান্ত চালানো হচ্ছে। কিছুদিন আগে সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙামাটিতে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্ত আর বারুদের গন্ধ পাচ্ছেন বলে উস্কানি ও চক্রান্তমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

বক্তারা বলেন, একদিকে সরকার নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে অন্যদিকে সন্তু লারমা ঢাকায় সুন্দরবন হোটেলে বসে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সরকারকে লাভবান করার চেষ্টা করছেন।
বক্তারা আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠি রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে ৩০ হাজার সেটলার বাঙালিকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। যার মাধ্যমে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি জনগণকে নিজ নিজ জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমি রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করার জন্য বক্তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। কিন্তু সরকার শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। প্রতিনিয়ত নিপীড়ন-নির্যাতন, ভূমি বেদখলের মাধ্যমে পাহাড়িদের শান্তি বিনষ্ট করা হচ্ছে। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন নির্যাতন জারি রেখে বাংলাদেশ কিছুতেই শান্তিতে থাকতে পারে না। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতন সহ খুন-গুম-বিনা বিচারে মানুষ হত্যার চিত্র তুলে ধরেন।
কনভেনশনে সর্বসম্মতিক্রমে ১১ দফা দাবি গৃহীত হয়।

উপরোক্ত দাবির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কনভেনশন থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।কনভেনশনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৮গণসংগঠনের কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সোনালী চাকমাকে আহ্বায়ক ও অংগ্য মারমাকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়। কনভেনশন শেষে সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি নারিকেল বাগান ঘুরে চেঙ্গী স্কোয়ারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর আবার সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন