গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ভূমি সংক্রান্ত নয় দফা দাবি

বিজ্ঞপ্তি:

তিন পার্বত্য জেলাকে পর্যটন জোন ঘোষণা, ভূমি কমিশনের বর্তমান কার্যক্রম এবং ভূমি কমিশনের সংশোধীত আইন বিষয়ে সেনা প্ররোচনায় সেটলার বাঙ্গালীদের বিভিন্ন অপতৎপরতা প্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮.০০ ঘটিকায় দিকে চট্টগ্রাম মহানগরের অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অংগ্য মারমা এবং সভা সঞ্চলনা করেন কেন্দ্রীয় সাধরণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা। শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরাসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা শুরু হয়।

বর্ধিত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সংশোধিত ভূমি কমিশন আইন ও ভূমি কমিশন বর্তমান কার্যক্রম এবং তিন পার্বত্য জেলাকে পর্যটন জোন ঘোষণাসহ সংগঠনের গৃহীত সিদ্ধান্ত বিষয়ে বিষদভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনা, পর্যালোচনা করেন। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নেতৃবৃন্দ এই কমিশন কতটুকু স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে এবং পাহাড়িদের হৃত জমি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সরকার কতটুকু আন্তরিক সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেন।

তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা হলো অন্যান্য সমস্যার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এই রাজনৈতিক সমস্যাকে কেবলমাত্র আইনী প্রক্রিয়ায় ও কাঠামোর মধ্যে সমাধান করতে চাওয়া কতটুকু যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।

চট্টগ্রাম মহানগরে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ১১তম কেন্দ্রীয় কমিটির ১ম বর্ধিত সভায় ভূমি সংক্রান্ত নিম্নোক্ত দাবি গ্রহণের প্রস্তাব গ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সকলে আলোচনা পর্যালোচনা মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত ৯ দফা দাবি গৃহীত হয়।

ভূমি সংক্রান্ত ৯ দফা দাবি – ১) বাংলাদেশ সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত প্রথাগত যৌথ ভূমি মালিকানার স্বীকৃতি দিতে হবে; ২) ভূমি বেদখল বন্ধ করতে হবে, বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং বেদখলকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ৩) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনকে পরিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির নামে বহিরাগতদের বৈধতা দেয়া চলবে না। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিয়ে আসা বহিরাগতদেরকে দেয়া অবৈধ কবুলিয়ত বাতিল করতে হবে; ৪) পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ঘোষণা পূর্বক স্থায়ী বাসিন্দাদের দ্বারা নির্বাচিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে এবং এই প্রতিষ্ঠানের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্পন করতে হবে; ৫) বহিরাগতদের কাছে জমি বিক্রয়, লিজ, বন্ধক কিংবা অন্য কোন উপায়ে হস্তান্তর সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে; ইতিমধ্যে যেসব জমি এভাবে হস্তান্তরিত হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাসিন্দাদের কাছে সরকারের দেয়া জমির লিজ বাতিল করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রকাশ্য সম্মতি ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন, আহরণ ও পাচার করা যাবে না; ৬) কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় জলে ভাসা জমি বা ফ্রিঞ্জ ল্যান্ড চাষীদের সুবিধার্থে পানির সীমা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পানির সীমা বৃদ্ধির নির্ধারিত ছক (রুল কার্ভ) যথাযথভাবে অনুসরণ ও এ সম্পর্কে চাষীদের অবহিত করতে হবে; ৭) সেনা, বিজিবি তথা নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প, সেনানিবাস, গ্যারিসন ইত্যাদির নির্মাণ ও সম্প্রসারণের নামে কিংবা পর্যটন, বনায়ন, শিল্প কারখানা স্থাপন ইত্যাদি অজুহাতে জমি অধিগ্রহণ বা বেদখল করা যাবে না; ৮) ভারত-প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদেরকে তাদের সাথে সরকারের সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক নিজ নিজ জমিতে যথাযথ পুনর্বাসন করতে হবে। আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদেরকেও  জমি ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করতে হবে। ৯) যে সব বহিরাগত পরিবারকে পাহাড়িদের জমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে তাদেরকে সমতল জেলায় সম্মানজনকভাবে জীবিকার নিশ্চয়তাসহ পুনর্বাসন করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন