ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’: আতঙ্কে উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গারা

fec-image

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় ঘোষিত ৪নং সতর্ক সংকেত অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শনিবার মধ্যরাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

এই ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে আছেন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড় ও বন কেটে ঝুঁকিতে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গারা।

তবে এ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টেকনাফ শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডেভেলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সকালে ক্যাম্পে বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর জানান, ক্যাম্প এলাকার পাহাড়ে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থান। এ সব রোহিঙ্গাদের মাঝে ঘুর্নিঝড় বুলবুল আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন ঘুর্নিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে, ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা যুবককে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ করেছে। এছাড়াও জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিও এবং আইএনজিও গুলোর সাথেও মাঠ পর্যায়ে আপদকালীন সময়ের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কার খবর ক্যাম্পে প্রচার করা হচ্ছে। নিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নিলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মীরাসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবী ও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

কক্সবাজারের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছেন। পাশাপাশি পাহাড়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারের স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাছাড়া সকল আশ্রয়কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত মসজিদ, স্কুল ও আশপাশের স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে শুক্রবার বিকাল ৩ টায় দূর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। উখিয়া উপজেথলা পরিষদ মিলনায়তনে সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেথলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী। সভায় উপজেলার সকল আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ সিপিপি টিম লিডারগণকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সতর্ক রাখার নির্দেশ দেয়া হয় ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানেচলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এনজিও গুলোর সমন্বয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। যা যা করা দরকার সবকিছু করা হচ্ছে উখিয়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়, বুলবুল, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন