ঢাকা লিট ফেস্টে ৩ রোহিঙ্গা কবির দেশে ফেরার আকুতি 

fec-image

রোহিঙ্গা কবিরা ঢাকা লিট ফেস্টে এসে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) লিট ফেস্টের বর্ধমান হাউসে উপস্থিত হয়ে ‘অলটারনেট ভয়েস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন আকুতির কথা জানান রোহিঙ্গা কবি ও ফটোগ্রাফার আব্দুল্লাহ হাবীব, শাহিদা উইন ও আইলা আক্তার।

সেশনে আব্দুল্লাহ হাবীব ইংরেজিতে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। অন্য দুজন তাদের মাতৃভাষায় বক্তব্য দেন। একজন অনুবাদক তা দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন।

বর্তমান বিশ্বে রোহিঙ্গা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে কবি আব্দুল্লাহ হাবীব বলেন, ‘আমি কবিতার মাধ্যমে আমাদের দুঃখ কষ্ট মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি। আমরা আরাকানের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই। আমার কমিউনিটি আমাকে এ বিষয়ে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। আসলে সত্যি বলতে, আমার দেশের পরিস্থিতি ও অবস্থা আমাকে কবি ও ফটোগ্রাফার বানিয়েছে।’

আক্ষেপ করে এই কবি বলেন, ‘আমার অনেক স্বপ্ন ছিল কিন্তু আমি জানি সেগুলো হয়তো পূরণ হবে না। তাই বলে আমি স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেইনি। আমাদের এখন একটাই স্বপ্ন, সেটা হলো দেশে ফেরা। খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি— এই বিংশ শতাব্দীর যুগে এসেও আমরা এখনও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছি না। আমাদের একমাত্র বাড়ি মিয়ানমার, আরাকান। আমরা সেখানে ফিরে যেতে চাই।’ মঞ্চে স্মৃতি কাতর হয়ে তিনি তার লেখা ‘গিভ মি এ চার্জ’ শিরোনামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

সেশনের আরেক আলোচক রোহিঙ্গা কবি শাহিদা উইন বলেন, ‘আমার বাবা একজন মাওলানা। আমি মালালা ইউসুফজাইকে অনুসরণ করে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম মালালা যদি পারে, তাহলে আমি কেন পারবো না? সর্বপ্রথম আমার দ্যা গ্রেট গার্ল নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। আমি যখন রাখাইনে ছিলাম, তখন ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি আমার কবিতার মাধ্যমে আরাকানে কেমন ছিলাম এবং বাংলাদেশে কেমন আছি, সেটাও তুলে ধরেছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’রোহিঙ্গা মেমোরি কালচার বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

মেয়েদের সবজায়গাতেই কাজ করতে বাধা-বিপত্তির শিকার করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেয়েদের বাইরে কাজ করা নিষেধ— আমার কমিউনিটিতেও আমি এমন কথা শুনেছি। এমনকি আমি কাজ করতে গিয়ে বাধার শিকারও হয়েছি। আমি মূলত আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে চেয়েছি। এইজন্য আমি কবিতা লেখা শুরু করি। এখন সবাই বুঝতে পারছে, কিন্তু প্রথমে এটা বোঝানো অনেক কষ্টকর ছিল। রোহিঙ্গা ট্র্যাডিশন অ্যান্ড কালচার নিয়ে আমি কাজ করছি।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শাহিদা উইন বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ভার্চুয়াল মাধ্যমে কবিতা লেখা শুরু করি, তখন অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার অনেকে ভেটো দিয়েছেন। কিছুদিন মন খারাপ করে লিখিনি। আবারও লেখা শুরু করেছি, স্বাধীন হয়েছি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য। আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই। আমাকে যেন রোহিঙ্গা মালালা হিসেবে আমার দেশের মানুষ চেনে, সেই জন্য কাজ করে যেতে চাই।’

রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কাজ করা আইলা আক্তার বলেন, ‘এটা সত্যি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এতো বড় একটা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ২০১৭ সালে আমরা আমাদের জন্মভূমিত থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে থেকেই আমি রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কাজ করি। রোহিঙ্গা নারীরা আর সব নারীদের মতো জীবন পার করতে পারে না। রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশিরভাগই অশিক্ষিত। এই জন্য প্রথম অবস্থায় আমার পড়াশোনায় অনেক বেশি বাধাগ্রস্ত হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগে মানুষের সাথে কথা বলতে ভয় পেতাম। ঠিক মতো কথা বলতে পারতাম না। রোহিঙ্গারা জনগোষ্ঠী হাসপাতাল কী, সেটাই বুঝতো না। আমি সেটা তাদের বুঝিয়েছি। বাংলাদেশ যদিও আমাদের দেশ না, তবুও আমরা এখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। কিন্তু আমরা আমাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চাই। আমি চাই আমার দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে। আমার দেশে গিয়ে রোহিঙ্গা নারীদের জন্য কাজ করতে।’

রোহিঙ্গারা কবে তাদের দেশের ফিরে যাবে, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য কী করতে পারি এবং ঢাকায় এসে কেমন লাগছে— উপস্থিত দর্শকদের এমন প্রশ্নের জবাব দেন রোহিঙ্গা কবিরা। তাদের সবার কথার সারমর্ম হলো, তারা তাদের দেশে ফিরে যেতে চান। কিন্তু সেই সুযোগ বা সামর্থ তাদের নেই। তারা তাদের বার্তা সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চান যে, তারা জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চান।

তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি মানুষের কাছে আমরা আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকবো। আমরা কখনও আমাদের দেশের রাজধানীতে যেতে পারিনি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসতে পেরে এবং এতো বড় মঞ্চে কথা বলতে পেরে সত্যি অনেক বেশি খুশি লাগছে।’

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন