দুনিয়ায় এমন কোনও শক্তি নেই যা চীনকে ঝাঁকুনি দিতে পারে: শি জিনপিং 

fec-image

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, দুনিয়ায় এমন কোনও শক্তি নেই যা এই মহান জাতিকে ঝাঁকুনি দিতে পারে। এ দেশের মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে চীনা জাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। সুতরাং এ জাতির অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেইজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কয়ারে সামরিক প্যারেডে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শি জিনপিং বলেন, আজ একটি সমাজতান্ত্রিক চীন দুনিয়ার পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে আছে। এই মহান জাতির ভিত্তি কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো কোনও শক্তি দুনিয়ায় নেই।

তিনি বলেন, চীনের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং এ ভূখণ্ডের দেশপ্রেমিক মানুষ পুরো দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। চীনের উন্নয়নে সমর্থন যোগানো সব বন্ধু জাতিরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ভাষণে ‘শান্তিপূর্ণ’ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন শি জিনপিং।

হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ান-এর নাম না নিয়েই অঞ্চলগুলোর গণতন্ত্রপন্থী ও স্বাধীনতাকামীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, পুনরায় একত্রীকরণের জন্য বেইজিং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হংকং-এর নাম না নিয়েই তিনি বলেন, চীন সরকার সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশটির স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।

শি জিনপিং বলেন, আমাদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন এবং ‘এক দেশ দুই নীতি’র বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। হংকং এবং ম্যাকাও-তে আমরা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখবো। আমরা পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবো। দেশের সম্পূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তিতে বেইজিংয়ে চীনা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এ সামরিক কুচকাওয়াজ এবং সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রায় ১০০টি দেশের সামরিক অ্যাটাশেদের।

চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেইজিং ‘পেশীশক্তি’ প্রদর্শন করছে না। এর প্রয়োজনীয়তাও দেখছে না তারা। বরং এর মাধ্যমে তারা ‘শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে’ উপস্থাপন করছে বেইজিং।

বিবিসি জানিয়েছে, চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) খুবই আগ্রহী। এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অত্যাধুনিক ভার্সনটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চীনা সমর বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, এ মারণাস্ত্রটি বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আঘাত হানতে এবং একই সময়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এশিয়া প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক শাংরি-লা ডায়লগের জ্যেষ্ঠ ফেলো আলেক্সান্ডার নেইল বলেন, ‘কুচকাওয়াজে অত্যাধুনিক অনেক মরণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারলেও চীন এখনও সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কয়েক দশক পিছিয়ে আছে।’

চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তারা একটি ‘শক্তিশালী সামরিক বাহিনী’ তৈরি করছে, যা একইসঙ্গে বিশ্বের প্রধান প্রধান সামরিক বাহিনীগুলোর সক্ষমতার সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনবে।

গত এক দশকে দেশটি প্রতি বছরই তাদের সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ করে বাড়িয়েছে; এ বছর তাদের সামরিক বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে দেশটি কেবল সমরাস্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নেই ৫৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। দেশটির সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্রে এ ব্যয়কে ‘যুক্তিসঙ্গত ও উপযুক্ত’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন