ধর্মীয় জ্ঞানই পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র মাধ্যম- মাওলানা হাফেজ শামসুল হক
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
রামু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব মাওলানা হাফেজ শামসুল হক জুমার খোতবা পূর্ব বয়ানে (বক্তব্যে) বলেছেন, ঐশী জ্ঞান তথা ইলমে দ্বীনের চর্চা না থাকলে এক সময় এই পৃথিবীর অস্থিত্বই বিলীন হয়ে পড়বে।
ইলমে দ্বীন হচ্ছে এমনকিছু জ্ঞান ও গুণের সমষ্টি যার মাধ্যমে মানুষ স্বীয় শ্ষ্টার ও তাঁর প্রেরিত রাসুলের পরিচয় লাভ করতে পারে। প্রভূর মনোনিত ধর্ম ও নবী কতৃক প্রবর্তিত বিধি বিধানের উপর অবগতি লাভ করতে পারে। যার মাধ্যমে মানুষ নবী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নিজের সকল অন্যায় আচরণ পদদলিত করে সততার গুনে গুণান্বিত হয়। পাশাপাশি সমাজের সকল অন্যায় অনাচার, দূর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা রোধকল্পে যুগোপযুগী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী হয়।
তিনি আরো বলেন, মানবজাতি অন্যান্য সকল সৃষ্ট জীবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে এই ইলমে দ্বীনের মাধ্যমেই। মহান আল্লাহতা’য়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন,“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের ইলম দেয়া হয়েছে, আল্লাহতা’য়ালা তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন”। কারণ এর মাধ্যমেই মানুষ স্বীয় অন্তকরণকে পশুত্ব থেকে পবিত্র করে মানবীয় গুনাবলী দ্বারা পূর্ণ করতে সক্ষম হয়। ইতিহাস স্বাক্ষী ইসলাম পূর্ব যুগ ছিল জাহেলী যুগ। সে যুগের মানুষ ইলমে দ্বীন থেকে সম্পুর্ণ অজ্ঞ ছিল তাই তাদের যুগকে অজ্ঞতার যুগ বা জাহেলী যুগ বলে। তাদের মধ্যে ইলমে দ্বীনের চর্চা না থাকার কারণে মারামারি,হানাহানি ছিল তাদের নিত্যদিনের স্বভাব। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ অব্যাহত থাকত পরস্পর যুদ্ধ বিদ্রোহ। সভ্যতা সাংস্কৃতি বলতে তাদের কিছুই ছিলনা। নিজ কন্যা সন্তানকে জিন্দা কবর দিতে তাদের হৃদয়ে সামান্যতম কম্পনও সৃষ্টি হতনা।
সেই জাহেলী যুগকে রাসুলে আরবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইলমে দ্বীনের পরশে একটি সোনালী যুগে রূপান্তরিত করেন। অন্ধকার যুগ থেকে পাপ পঙ্কিলতার অমানিশা দূরীভূত করে সত্যের আমোঘ শিখা প্রজ্জলিত করেছেন। অতএব, বর্তমান ঘুনেধরা পাপ পঙ্কিলতার গহীনে নিমজ্জিত সমাজকে পরিশুদ্ধ করার জন্য ঐশী জ্ঞান চর্চার বিকল্প ন্ইে। তাই রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন “ইলমুল হাল (সময় উপযোগী জ্ঞান) অর্জন করা প্রত্যেক মু’মিনের উপর ফরজ।”
ইলমে দ্বীনের ফজীলত বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, মহাগ্রন্থ আল কোরানে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন-“আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে তাকে তো প্রভূত কল্যাণ দেয়া হয়েছে (সুরা বাকারা-২৬৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি কখনো বরাবর হতে পারে?” আয়াতের ভাবার্থ কবি সুন্দর ভাষায় বর্ণনা করেছেন-
“জ্ঞানী মূর্খ আলেম- জাহেল কি করে সমান হয়?
উজ্জল আলোক-নিকষ কালো কভূ বরাবর নয়।”
হাদীস শরীফে রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন অর্জনের জন্য পথ চলে আল্লাহ তাঁর জন্য বেহেস্তে পৌছার রাস্তা সহজ করেছেন” অন্যত্র ইরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি দ্বীনকে জিন্দা করার জন্য ইলম অর্জন করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, জান্নাতে তাঁর এবং নবীদের মাঝে মাত্র একটি দরজার পার্থক্য থাকবে। তিনি হাদীস শরীফের উদ্বৃতি দিয়ে আরো বলেন “ইলমে দ্বীন পিপাসুদের জন্য নিষ্পাপ ফেরেস্তারা স্বীয় রহমতের পাকা বিছিয়ে দেন এবং গর্তের পিপড়া ও সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার পড়তে থাকে।
কারণ তাদেরকে মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঐশী জ্ঞানের চর্চা থাকলে দুনিয়াতে আল্লাহকে স্মরণকারী থাকবে আর যখন ঐশী জ্ঞানের চর্চা তথা দ্বীনি তালিম তারবিয়াত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীতে জাহিলিয়াতের সয়লাব হবে মূখর্তা ও পাপ পঙ্খিলতা বেড়ে যাবে ফলে মানুষ আল্লাহকে ভূলে পশুর মত হয়ে যাবে। আর তখন আল্লাহ তা’য়ালা এই দুনিয়া ধ্বংশ করে দিবেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমান যুগে কওমী মাদ্রাসাই হচ্ছে ইলমে দ্বীন চর্চার মূলকেন্দ্র। দুনিয়ার সকল লোভ লালসা পরিহার করে ঐশী জ্ঞান শিক্ষা দানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারা নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আসছেন।
পরিশেষে তিনি সকল মুসলমান ভাইদেরকে মহানবীর অমীয় বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,“তোমরা হয়ত ইলমে দ্বীনের শিক্ষক হও অথবা ছাত্র হও কিংবা তাদের সাহায্যকারী হও চতুর্থ নম্বরে যেয়ো না।” অর্থাৎ মুসলমান বলতে উল্লেখিত তিন প্রকারের একজন হতেই হবে। কোন মুসলমান যারা আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) কে বিশ্বাস করে তারা কখনো এই তিন প্রকারের ঘন্ডির বাহিরে যেতে পারে না। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকে এই তিন প্রকারের ভিতরে জীবনযাপন করার তৌফিক দান করুন।