ধোঁকার আশ্রয় না নিয়ে অবিলম্বে ১৩ দফা মেনে নিন- আল্লামা শফী

 
নিজস্ব প্রতিবেদক
আল্লামা শফী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ধোঁকার আশ্রয় না নিয়ে অবিলম্বে ১৩ দফা মেনে নিন।” এর বিকল্প কিছু ভাবলে সরকারকে চরম খেসারত দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন হেফাজতের আমির।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপব্যাখ্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী। তিনি বলেন, “প্র্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ১৩ দফা বাস্তবায়নের কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। বরং তিনি এই ১৩ দফার অপব্যাখ্যা করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল করেছেন।”

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লালবাগ মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল্লামা শফী এ অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিগত ৬ এপ্রিল লংমার্চ পরবর্তী মতিঝিল শাপলা চত্বরে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মহসমাবেশ থেকে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আলহামদুলিল্লাহ! ইতিমধ্যেই এই কর্মসূচি সফলের সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজারো নবীপ্রেমিক জনতা ঢাকা এসে পৌঁছে গেছেন। আরো লাখ লাখ তাওহীদি জনতা ঢাকা অভিমুখে আজই যাত্রা শুরু করেছেন বলে আমাদের কাছে সংবাদ রয়েছে। সরকার ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাজারো বাধা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে যে ঈমানদীপ্ত কাফেলা ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা দিয়েছেন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কেউ রুখে রাখতে পারবে না।”
 
তিনি বলেন, “শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি আমাদের আন্দোলন অহিংস, অসহিংস। আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। জ্বালাও পোড়াও, হিংসা-হানাহানিতে আমরা বিশ্বাসী নই। বিগত সময়ের সব কয়টি কর্মসূচি বিশেষত ৬ এপ্রিল লংমার্চ পরবর্তী মহাসমাবেশে আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে দেখিয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের কর্মসূচিগুলো বাধাগ্রস্ত ও বানচাল করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে হরতাল, অবরোধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করার অপচেষ্টা করেও তা সফলে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”

আল্লামা শফী বলেন, “আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই ১৩ দফা মেনে নিন। ভয়ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলপ্রেমিকদের দমানো যাবে না। যেকোনো মূল্যের বিনিময়ে আগামীকাল ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করা হবেই ইনশাআল্লাহ। আমরা সারাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হাতে তাসবিহ, জায়নামাজ, মিসওয়াক ও শুকনো খাবার নিয়ে আগামীকাল ফজরের সময় ঢাকার সব কয়টি প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ময়দানে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”

হেফাজত আমির বলেন, “মনে রাখতে হবে, আমাদের ১৩ দফার এই আন্দোলন নিরেট একটি ঈমানি আন্দোলন। কাউকে ক্ষমতা থেকে হটানো বা কাউকে ক্ষমতায় বসানো আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য নয়। ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো রাজনৈতিক অভিলাস আমাদের নেই। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশে বা দেশের বাইরে কোনো মহলকে শত্রু কিংবা মিত্র হিসেবে সাব্যস্ত করতে চাই না। দেশের নিয়মতান্ত্রিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা কেবলই আমাদের ঈমান ও ধর্মীয় অধিকারের প্রশ্নে অটল ও অবিচল থাকতে চাই। তাই আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক কোটি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ময়দানে অবস্থান করছি।”
 
শফী বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো মত ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন বিষয়ে তার বক্তব্যে স্ব-বিরোধী ভুল ব্যাখা ও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাই ছিল বিশেষভাবে লক্ষ্যলীয়। সে কারণেই আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওপর ভরসা রেখে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি যথারীতি বহাল রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করছি। আমরা ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক মানুষকে কোনো রকম বিভ্রান্তির শিকার না হয়ে পূর্ণ উদ্যম ও প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহবান জানাচ্ছি। আমরা সাভারের মর্মান্তিক ঘটনায় উদ্ধার কাজ, রক্তদান কর্মসূচি, নগদ অর্থ প্রদান ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ করেছি। মানবিক বিবেচনায় আমাদের এই তৎপরতা সবসময় অব্যাহত আছে এবং থাকবে। সুতরাং সাভার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সর্বপ্রকার যানবাহন, দেশী বিদেশী পরিদর্শকদের গাড়িসহ এ জাতীয় সবরকম যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে। আমাদের সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের কাছে এই নির্দেশ পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছে। মানবিক এসব দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে তাদের যানবাহনে স্টীকার ব্যবহারের অনুরোধ করছি।”
 
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সাভার ট্রাজেডি সংশ্লিষ্ট মানবিক বিবেচনাসহ হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফার বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। তার বক্তব্যে ১৩ দফা মেনে নেয়ার কোনো রকম সিদ্ধান্ত ও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। বরং এ সব দাবির বিষয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর কথা ও হেফাজতের ইসলামকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যই উঠে এসেছে। এতে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি স্থগিতের মতো কোনো রকম উপাদান নেই বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতার বহু নজির ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার হেফাজতের ১৩ দফা ‘সংবিধানবিরোধী’ ও ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলার পরও তিনি বিভিন্ন দফার পয়েন্ট উল্লেখ করে সেসব দফার পক্ষে প্রচলিত আইনে কী কী ধারা-উপধারা রয়েছে তাও উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে ভুল ও অসত্য ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে দফাগুলোর অযৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে ১৩ দফা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ব্যাখ্যার বিস্তারিত দিক তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার ভোর ৬টা থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেবেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বাইরে থেকে কোনো পরিবহণ ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে না। তবে রাজধানীর ভেতরে পরিবহণ চলতে তারা কোনো বাধা দেবেন না। এছাড়া সাভারের ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সব গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে। তবে এ কাজে নিয়োজিত গাড়িতে স্টিকার ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন