নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনে সয়লাব রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন হাটবাজার

fec-image

উখিয়ার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ রোহিঙ্গ ক্যাম্প সংলগ্ন হাট বাজারে দিন দিন বেড়েই চলেছে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার। কোন কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না এই নিষিদ্ধ পলিথিন ক্রয়-বিক্রয়ে। আর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব অপচনশীল দ্রব্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে জনজীবন ও জীব বৈচিত্র্য।

উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শপিং মল, কাঁচা বাজার, মাছ বাজারে পলিথিন বিক্রি ও বিপননের রীতিমত উৎসব চলছে। বিশেষ করে উপজেলাসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভন্তরে গড়ে উঠা হাট বাজারের বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে এসব পলিথিনের ব্যবহার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উখিয়া সদর ছাড়াও কুুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী বাজার সহ আশপাশের দোকানপাটে গ্রাহকদের হাতে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছে।

ফলে মাটি হারাচ্ছে তার উর্বরতা ও বন্ধ হচ্ছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দূষিত হচ্ছে বিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহ। সেই সাথে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগ জীবাণু। সল্প পূঁজিতে অধিক লাভজনক ও বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দুর দুরান্ত থেকে কৌশলে বিভিন্ন রকমের এসব পলিথিন নিয়ে এসে দেদারছে বিক্রি করছে হাটবাজারে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রমতে ১৯৮২ সালের প্রথম দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রথম পলিথিনের বাজারজাত ও ব্যবহার পর্ব শুরু হয়। সহজে পরিবহন যোগ্য ও স্বল্পমূল্যের কারণে এদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পলিথিনের ব্যাবহার দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে পলিথিনের ব্যাপক চাহিদা ও যত্রতত্র ব্যবহার এবং ফেলে রাখার কারণে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিশেষ করে ড্রেন, ডোবা, পুকুর, নালা, খাল সহ বিভিন্ন জলাশয়ে পলিথিন জমা হবার কারণে ওইসব স্থানে জলের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। যার দরুন মশা-মাছির প্রজনন বৃদ্ধি সহ পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

এর ফলশ্রুতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, ক্রয় -বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সরকারের পক্ষে নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার একযুগ পরেও আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। সরকারি তথ্যমতে, ২০১০ সালে পলিথিনের পরিবর্তে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারের আইন পাশ করা হয়।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ২০০২ সালের দিকে পলিথিন ব্যাগ বা পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ হওয়ার পর সারাদেশে এর বিপক্ষে জোরালো অভিযান পরিচালিত হয় এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পার হয়ে যায়, কিন্তু আইন ভঙ্গ করে যারা পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি বা আইনগত তেমন কোনো প্রক্রিয়া এখন আর দেখা যাচ্ছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় সেই পুরোনো আদলেই পলিথিন ব্যবহার শুরু হয়েছে

বলা হয়ে থাকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ ও ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে রপ্তানিমুখী শিল্প ব্যতীত বাংলাদেশে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদনকারী শিল্পের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২০০২ সালে। ওই বছরই ১ জানুয়ারি ঢাকায় এবং ১ মার্চ সারাদেশে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ( সংশোধিত )- ২০০২ অনুযায়ী, এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড–এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বাজারে এসব পলিথিন ব্যবহার করা হলেও এই আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৩ সালে সারাদেশে প্রতিদিন ৪.৫ মিলিয়ন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হতো। ২০১৩ সালে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯.৩ মিলিয়নে বর্তমানে তার দ্বিগুন এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এদেশের জনস্বাস্থ্যে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য অপেক্ষা করছে মারাত্মক বিপর্যয়।

এ বিষয়ে “পরিকল্পিত উখিয়া চাই” এর আহ্বায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ বলেন, পলিথিন যেমন নষ্ট করছে মাটির উর্বরতা তেমনি আমাদের পয়ঃনিস্কাসন ব্যবস্থাও নষ্ট হচ্ছে দিন দিন। পলিথিনের কারণে গাছ তার জীবনীশক্তি হারাচ্ছে, তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ এই পলিথিনের উৎপাদন বিপননকে কঠোরভাবে দমন করা হোক।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা প্রশাসনের উদ্যোগে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে এই ব্যবসায় পুনরায় ফিরে আসে, আমরা এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো এবং শীঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন