পাহাড়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দ্বিচারিতা


মানবাধিকার রক্ষা একটি সভ্য রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু যখন মানবাধিকার রক্ষার নামে রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়, তখন তা মানবাধিকার নয়, বরং রাজনৈতিক পক্ষপাত ও জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে পরিণত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক এবং অতীতের সহিংসতা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবির পেছনে কিছু মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই প্রবন্ধে খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক দাঙ্গা, মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতি, নারী সম্ভ্রমকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো, আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি, জুম্মল্যান্ড, কুকিচীন ল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ পরিবারের “গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড” দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করব।
খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক সহিংসতা, বাস্তবতা ও বিভ্রান্তি:
২০২৫ সালের সদ্য সামপ্ত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ খাগড়াছড়ির তাণ্ডব দেখেছে দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। খাগড়াছড়িতে মার্মা সম্প্রদায়ের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উপজাতি কিছু মানুষের গড়ে তোলা সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ (মূল) এর দাবিকৃত সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ইউপিডিএফের অঙ্গসংগঠন পিসিপি ও উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে জুম্ম ছাত্র জনতার বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও হরতাল পালিত হয়। সামাজিক মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ব্লগার ও কিছু স্থানীয় ব্যক্তির উসকানিমূলক প্রচারণার ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীর টহলদলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, তিনজন সেনাসদস্য আহত হন।
পরবর্তীতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বাঙালিসহ সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, রাস্তা অবরোধসহ নাশকতা চালায়। পরিস্থিতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়। জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তা অবরোধ করা হয়।
এই সহিংসতায় বিনা কারণে সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালানো হয়। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। ইউপিডিএফ সশস্ত্র অবস্থায় এসে উপজাতিদের ঘরে আগুন দেয়ার এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অস্ত্র হাতে তাদের উপস্থিতি ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। ফলে তিনজনের মৃত্যুর দায় নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অবরোধ ও হরতালের নামে কয়েক হাজার পর্যটককে জিম্মি করা হয়েছে, যারা মানবেতর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। এই ঘটনায় বাঙালি ও উপজাতি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস বেড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবাই।
মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতি, পক্ষপাত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিততা:
এই ঘটনার পর হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন ২৯ সেপ্টেম্বর একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে তারা ধর্ষণের অভিযোগ করে, আন্দোলন, সহিংসতা ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়। তারা দাবি করে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী এবং গুইমারার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ও বাসগৃহের মালিকেরা পাহাড়ি (উপজাতি) সম্প্রদায়ের মানুষ।
এই বিবৃতিতে কারো স্বাক্ষর না থাকলেও ২৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছেন- ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, খুশি কবির, সুলতানা কামাল, সারা হোসেন, সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ। এদের অনেকেই অতীতে আদিবাসী স্বীকৃতি আন্দোলন, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতি, এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
বিবৃতিটি এমনভাবে রচিত, যেন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীই কেবল ভুক্তভোগী, আর অপর পক্ষ নিছক দমনকারী। অথচ বাস্তবতা হলো- এই ঘটনায় বাঙালি ও উপজাতি উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাঙালিদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়েছে, এবং সশস্ত্র উপজাতীয় সংগঠনের সদস্যরা সাধারণ বাঙালিদের উপর গুলি চালিয়েছে- যার ভিডিওচিত্র সংরক্ষিত আছে।
নারী সম্ভ্রম: রাজনীতির হাতিয়ার?
পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো সমতলের অপরাধের মতো নয়; এখানে জাতিগত ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে অপরাধের বিচার হয় ন্যায় দেখে নয়, জাতি দেখে। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের জাতিগত পরিচয়ই নির্ধারণ করে প্রতিবাদ হবে কি না।
যখন উপজাতি নারী বাঙালির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন, তখন প্রতিবাদ, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও হয়। কিন্তু উপজাতি নারী যদি সজাতি কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, তখন হয় সালিশ, শুকর জরিমানা, অথবা নীরবতা। এই দ্বিচারিতা শুধু স্থানীয় রাজনীতিতে নয়, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকাতেও স্পষ্ট।
কয়েকটি উদাহরণ:
উল্লেখযোগ্যভাবে, খাগড়াছড়ি শহরে দুলাভাইয়ের বাসায় কলেজছাত্রী ইতি চাকমা ধর্ষণ ও হত্যায় (২০১৭) প্রথমে বাঙালিদের দায়ী করে হরতাল-অবরোধ, জালাও-পোড়াও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে- উপজাতি যুবক তুষার চাকমা ও তার সহযোগীরা হত্যাকারী।
২০১৪ সালে রাঙামাটিতে বিশাখা চাকমার লাশ কাপ্তাই হ্রদে পাওয়া যায়। ঘটনার পরপরই শুরু হয় বাঙালিদের দোষারোপের রাজনীতি। শুরু হয় সমাবেশ-মানববন্ধন। কিন্তু পুলিশি তদন্তে দেখা যায়- তার স্বামী লক্ষীরাম চাকমার উপস্থিতিতে সঞ্জয়, তত্তারাম ও বিনোদ চাকমা মিলে ধর্ষণ ও হত্যা করে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। রাঙামাটি কতোয়ালি থানার ওসি মনু ইমতিয়াজ সোহেল তখন এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। (সূত্র: সিএইচটি টাইমস, ২২ নভেম্বর ২০১৪।)
একই বছর মানে ২০১৪ সালে বান্দরবানে ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকা উ প্রু মারমাকে ধর্ষণেরপর ও হত্যা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তুলে স্থানীয় উপজাতীয় সংগঠনের সদস্যরা বাঙালি কাঠুরিয়া মুসলিম উদ্দিনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায় ওই ধর্ষণ ও হত্যার মূল খলনায়ক রশদ তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা, যে একজন উপজাতি যুবক। (সূত্র: পার্বত্য নিউজ, ৮ জুন ২০১৪)।
২০১৪ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে সবিতা চাকমার লাশ পাওয়া যায়। বাঙালি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে দায়ি করে গণধর্ষণের অভিযোগে আন্দোলন করে উপজাতীয় সংগঠন। কিন্তু ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো আলামতই পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন এড়াতে এখানে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন- খাগড়াছড়ি সদর হাসপালসহ পাহাড়ের হাসপাতালগুলোতে অধিকাংশ চিকিৎসকই উপজাতি।
আর এ বছরের (২০২৫) ১৯ আগস্ট বান্দরবানে ৫ মারমা উপজাতি যুবক এক মারমা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। কোনো সংগঠন প্রতিবাদ করেনি, বরং ঘটনা চেপে যাওয়া হয়। স্থানীয় সালিশে শুকর জরিমানা দিয়ে বিচার মীমাংসার চেষ্টা হয়।
সদ্য খাগড়াছড়ির ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় সেনাবাহিনী অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলেও, ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজাতীয় সংগঠন হরতাল-অবরোধ দেয়, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিশ্লেষণ করা হয়।
এইসব ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থাগুলো প্রায়শই একপাক্ষিক ভূমিকা পালন করেছে। তারা উপজাতি ভুক্তভোগীর পক্ষে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু বাঙালি ভুক্তভোগীর বিষয়ে নীরব থেকেছে। তাদের বিবৃতি, প্রতিবাদ, এবং আন্তর্জাতিক মহলে চাপ তৈরির কৌশল দ্বিচারিতা ও পক্ষপাতের নিদর্শন হয়ে উঠেছে।
বেড়েছে অবিশ্বাস ও দুরত্ব:
এই অবস্থান শুধু মানবাধিকার নয়, বরং রাজনৈতিক পক্ষপাত। এতে উপজাতি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস বেড়েছে, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
এইসব ঘটনায় প্রথমে বাঙালিদের অভিযুক্ত করে আন্দোলন, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তে অধিকাংশ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, এমনকি সজাতি কর্তৃক অপরাধ সংঘটিত হওয়ার তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব ঘটনায় একপাক্ষিকভাবে বিবৃতি দিয়ে উপজাতি ভুক্তভোগীর পক্ষে দাঁড়ায়, কিন্তু বাঙালি ভুক্তভোগীর বিষয়ে নীরব থাকে।
আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি: কার স্বার্থে?
বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে “উপজাতি” শব্দ ব্যবহার করেছে, যা জাতীয় সংহতি ও সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি “আদিবাসী” স্বীকৃতির নামে আন্তর্জাতিক ফোরামে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে।
এই দাবির পক্ষে সক্রিয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- রাজাকারপুত্র হিসেবে পরিচিত, মুক্তিযুদ্ধ চালাকালে পালিয়ে পাকিস্তান চলে যাওয়া- ত্রিদীব রায়ের সন্তান ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, সন্তু লারমা এবং মানবাধিকার সংগঠনের পরিচিতমুখগুলো।
ত্রিপুরা রাজ পরিবারের দাবি, গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড:
বিভিন্ন সময় উত্থাপিত “জুম্ম ল্যান্ড, কুকিচীন ল্যান্ড, আদিবাসী রাষ্ট দাবির পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজপরিবারের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামহসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম নিয়ে ত্রিপুরা ল্যান্ড গঠনের পক্ষে দাবি তুলেছে।
ত্রিপুরা রাজ পরিবারের সদস্য রাজা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরা ল্যান্ড গঠনের পক্ষে সোচ্চার। তিনি দাবি করেছেন, ত্রিপুরা রাজ্যের ঐতিহাসিক সীমান্ত পুনঃস্থাপন করে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, যেখানে বাংলাদেশ চট্টগ্রামসহ অংশবিশেষও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই দাবিকে কেন্দ্র করে জাতীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত রাজনীতি, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, এই দাবির বিরুদ্ধে কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা অবস্থান দেখা যায়নি, যা রাষ্ট্রীয় নীরবতা ও কূটনৈতিক দুর্বলতার ইঙ্গিত বহন করে।
জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন:
যখন মানবাধিকার সংগঠনগুলো একপাক্ষিক বিবৃতি দেয়, এবং সেই বিবৃতিতে রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের স্বাক্ষর থাকে, তখন তা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, এটি বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য এবং জাতিগত সংহতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানবাধিকার রক্ষার নামে যদি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, যদি আন্তর্জাতিক মহলে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়, এবং যদি সংবিধানবিরোধী আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি তোলা হয়—তবে তা সরাসরি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান।
ত্রিপুরা রাজ পরিবারের “গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড” দাবির মতো হুমকির বিরুদ্ধে কোনো মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেনি, এবং সরকারের নীরবতা কূটনৈতিক দুর্বলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অবহেলার ইঙ্গিত বহন করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার সন্ত্রাসমুক্ত, সংবিধানসম্মত, এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়ন। কিন্তু যখন মানবাধিকার রক্ষার নামে পক্ষপাতমূলক বিবৃতি দেওয়া হয়, তখন তা শান্তির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
পরিশেষে বলতে চাই- আমি ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে; আমি সব ভুক্তভোগীর পক্ষে। তবে আমার অবস্থান কখনোই জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আপস করে নয়। আমার কাছে সবার আগে মানুষ, দেশপ্রেম তথা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা এবং সংবিধান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার রক্ষার নামে যে দ্বিচারিতা চলছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়- এটি জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় নীতিমালা, এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রশ্ন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো যদি সত্য, নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা বজায় না রাখে, তবে তারা মানবাধিকার নয়, বরং রাজনৈতিক পক্ষপাতের বাহক হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও জাতীয় ঐক্য রক্ষায় আমাদের সাংবাদিক, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিক ও সাধারণ নাগরিক সকলকে সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। পক্ষপাত নয়, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোই হবে প্রকৃত মানবাধিকার।
লেখক : সাংবাদিক, লেখক গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।