সেনাবাহিনীর উপর হামলা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের উপর হামলা

পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস দমনে সেনা বিন্যাস ঢেলে সাজানো জরুরী

fec-image

ওরা কারো বন্ধু নয়। সুযোগ পেলে তারা সাবাইকে ছোবল মারে। সাধারণ মানুষ কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, কারো রেহাই নেই।তাদের হাতে রয়েছে এলএমজি, এসএমজি, একে৪৭ রাইফেল, ৭.৬২ মি.মি. রাইফেল, এম-১৬ রাইফেল, জি-৩ রাইফেল, ০.২২ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, পিস্তল, মর্টার, দেশীয় পিস্তল, দেশীয় বন্দুক, হ্যান্ড গ্রেনেড ও রকেট লাঞ্চারসহ আধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র। এরা কাউকে পরোয়া করে না। এরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, গাছের ফল, ক্ষেতের ফসল, ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষক-শ্রমিক-মৎস্যজীবী, সড়কে চলাচলকারী সকল প্রকার যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, স্থানীয় উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার, দেশীয় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, জমি কেনা-বেচা,বাড়ী-ঘর নির্মাণ এমনকি ডিম-কলা বিক্রি করতে গেলেও চাঁদা নেয়, চাঁদা না দিলে অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এটি কোন কাল্পনিক উপন্যাস নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান চিত্র। আর এ সব অপকর্মে সাথে জড়িত পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। এগুলো হচ্ছে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় অধিষ্ঠিত আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস(মূল), জেএসএস (এমএন), প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ(মূল) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। এই চারটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বছরে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে। তাও আবার অনেকটা প্রকাশ্যে।

১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত পাহাড়ে শান্তি বাহিনীর নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠির অস্তিত্ব ছিল। যার নেতৃত্বে ছিলেন, বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় ওরফে সন্তু লারমা। তার বাহিনীর হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৩০ হাজার মানুষ খুন হয়েছিল বলে অভিযোগ। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আশার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সরকারের সাথে চুক্তি করেন। চুক্তির ফলশ্রুতিতে ১৯৯৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে সন্তু লারমা ও তার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র সমর্পন করেন। কিন্তু ঐদিনই চুক্তি প্রত্যাখান করে তারই শিস্য প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ।

শুরু হয় পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনী, সন্তুর জেএসএস ও প্রসীতের ইউপিডিএফ’র ত্রিমুখী সংঘাত। তারপর ২০০৯ সালে সন্তুর জেএসএস ভেঙ্গে প্রয়াত সুধাসিন্দু খীসারা নেতৃত্বে জেএসএস এমএন গ্রুপ ও সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ ভেঙ্গে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। ফলে পাহাড়ের মানুষ এখন এক থেকে চার সন্ত্রাসী গ্রুপের নিপিড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে চার সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে মেরুকরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সন্তুর জেএসএস প্রসীতের দীর্ঘদিন সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও গত কয়েক বছর ধরে তাদের মধ্যে সখ্যতা বিরাজ করছে। তেমনি সখ্যতা রয়েছে জেএসএস লামরা ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের মধ্যেও।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চার সশস্ত্র সংঘঠনের চাঁদাবাজি, ক্ষমতা দখল, আধিপত্য বিস্তার ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর এ পর্যন্ত ৯ শতাধিক মানুষ খুন হয় এবং ১৫শ’ গুম হয়েছে। খুনের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সরকারী কর্মকর্তাও রয়েছে। যার সর্বশেষ শিকার বান্দরবানের রুমায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান। এ সময় সেনাবাহিনীর আরো এক সদস্য ফিরোজ আহত হন। পাল্টা গুলিতে তিন সন্ত্রাসী নিহত ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়।

এ ঘটনায় পাহাড়ের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং এ ধরনের হামলাকে রাষ্ট্রের ওপর হামলা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। এ হামলার পর পাহাড়ের মানুষের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নিরাপত্তার অভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে পাহাড়ের পর্যটন খাতেও। অবশ্যই পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের হামলা ও সন্ত্রাস নতুন কোন ঘটনা নয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট রাঙামাটির রাজস্থলীর গাইন্দ্যা ইউনিয়নের পোয়াইথুপাড়ায় সেনাটহলে সশস্ত্র হামলায় নাসিম আহমেদ নামের এক সেনাসদস্য নিহত এবং ক্যাপ্টেন মেহেদী ও সৈনিক মশিউর আহত হন। এ ঘটনার ৫ দিনের মাথায় ২৩ আগস্ট বাঘাইছড়ির সাজেকের উজোবাজারে দুই সশস্ত্র গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধের খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর টহল দল অভিযানে গেলে অস্ত্রধারীরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে সেনাবাহিনীর গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সেনা সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়লে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তসহ এক সন্ত্রাসীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভরদুপুরে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সরকারি কার্যালয়ে ঢুকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করা হয় ইউপি মেম্বার সমর বিজয় চাকমাকে। এ ঘটনায় মামলা হলেও কোন সন্ত্রাসী এখনো গ্রেফতার হয়নি। ২০১৯ সালের ৩ মে নিজ কার্যালয়ের সামনে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেএসএস এমন গ্রুপের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

পরদিন তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ৫ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে সন্ত্রাসী। এ সময় আরো ৮ জন আহত হয়। এ ঘটনার জন্য দল দুটি প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফকে দায়ী করে। অভিযোগ আছে এ ৬ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতেই সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরে প্রসীতপন্থী ইউপিডিএফের ৭ নেতাকর্মীকে ব্রাশ ফায়ারে খুন ও ৭ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ জন্য সংগঠনটি প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও সংস্কারবাদী জেএসএসকে দায়ী করে।

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটির উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে অস্ত্রধারীদের ব্রাশফায়ারে দুজন পোলিং কর্মকর্তা, চারজন আনসার সদস্যসহ ৭ জন নিহত হন। এ ছাড়া ৫ পুলিশ সদস্য,সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আনসার সদস্য ও সাধারণ মানুষসহ, ৩১ জন আহত হন।

পাহড়ের একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, হত্যা,চাঁদাবাজিসহ নানা চলমান সন্ত্রাসী ঘটনাকে রাষ্ট্রের ওপর হামলা এবং সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানো বলে মনে করছে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, সন্তু লারমারসহ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো মূলত: চাঁদাবাজির অর্থে কেনা অস্ত্রে ফের সক্রিয় হচ্ছে এবং স্বাধীন জুম্মল্যান্ড ঘোষণার নীল নকশা বাস্তবায়নের পথে এগুচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন, সেনাবাহিনীর ওপর হামলায় সার্বভৌমত্বে প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি। এটা গোটা রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের ওপর চ্যালেঞ্জ। পাহাড়ে সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা বন্ধে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সক্রিয় হচ্ছে। পাহাড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে কঠিন ভূমিকা নিতে হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, সামরিক কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আস্কারা পেয়ে এরা পাহাড়ে একের পর হত্যাকাণ্ড ঘটনোর সাহস পাচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, ২ ডিসেম্বর আসলেই শান্তি র‌্যালি হয় পাহাড়ে, তাহলে কেনো স্বাধীন দেশে আমার দেশের সৈনিকদের প্রাণ দিতে হবে?

অভিযোগ রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা মানুষকে শোষণ করে। আবার বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা চালায়। আর কতিপয় সুশীল সমাজের মানুষ তাদের সমর্থন দেয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর এ অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ইতিমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ৯টি ধারার বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অথচ চার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ পাহাড়ে জুম্মল্যাণ্ড করার ষড়যন্ত্র করছে। চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি। স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের এক দশমাংশকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকরা দেশি-বিদেশী চাঁদার টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করছে। সাধারণ মানূষের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদার টাকায় সন্ত্রাসী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দেশে বিদেশে বিলাস বহুল জীবনযাপন করছে। এ সব নেতাদের ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিলাস বহুল বাড়ি রয়েছে। তাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশুনা করছে। দেশে ও দেশের বাইরে যারা প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে তারা চাঁদার ভাগ পাচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তে ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমার সীমান্তে শতাধিক কিলোমিটার সীমান্ত এখনো অরক্ষিত। দুর্গম এ অরক্ষিত সীমান্তে এলাকায় কোন রাস্তা নেই। এ সীমান্তের ওপারেই রয়েছে রাষ্ট্র বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ৭টি আস্তানা। সেখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। তাদের রয়েছে মাদক ব্যবসা।

ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্গম এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পায়ে হেঁটে যখন সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ফলে দুগূম এলাকাগুলোতে সড়ক নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের দাবী, পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ২৪ বছরে গুম হওয়াদের মধ্যে ৬০ ভাগ মুক্তিপণের টাকা দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। বাকিদের হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে। তবে সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে পাহাড়ে অপরাধীদের শাস্তি হয় না। কারণ যিনি সাক্ষী দেন তাকেও হত্যা করা হয়।এই কারণে কেউ সাক্ষী দিতে চান না। ফলে পার যেয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম মতে, পাহাড়ে মাঝে মাঝেই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। তবে সন্ত্রাস দমনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি যৌথভাবে কাজ করছে।

অপর দিকে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার দাবী ‘আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তি এবং গণমাধ্যমের সংবাদে ‘সন্তু লারমা সমর্থিত জেএসএস মূল দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে সেনাবাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, বস্তুত ওই ঘটনার সঙ্গে জনসংহতি সমিতি বা সমিতির কোনো সদস্য জড়িত নয়। জনসংহতি সমিতির কোনো ধরনের সশস্ত্র গ্রুপ নেই। কাজে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

জেএসএস এমন দাবী করলেও সকলেই পাহাড়ের বাস্তবতা জানে। বান্দরবান কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের দখলে, রুমা উপজেলা কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের অভয়ারণ্য সকলেই জানেন। জানা গেছে, রুমার একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের আশ্রিত সন্ত্রাসী গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জাড়িত। ঐ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক পরিচয় সকলেই জানেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান সশস্ত্র তৎপরতা ও সংঘাত নিরসনে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অবিলম্বে পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্পগুলোতে পুণরায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক এবং বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেখানে যেখানে প্রয়োজন নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হোক। একই সাথে মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড, টাস্কফোর্সসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন সেনা কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগ করা হোক। সিটি কর্পোরেশনসহ বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ডেপুটেশনে কাজ করতে দেখা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের সাথে নিরাপত্তার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জাড়িত থাকায় এ নিয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে।

♦ লেখক: ব্যুরো প্রধান, পার্বত্যনিউজ, খাগড়াছড়ি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জেএসএস, পাহাড়ে সন্ত্রাস, সেনা সদস্য নিহত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন