কক্সবাজারে ডেলিভারি রোগীর ‘মনগড়া বিল’ নিয়ে ডাক্তার হাসপাতাল দোষ চাপাচাপি!

fec-image
৩ জানুয়ারি ভোর সাড়ে পাঁচটা। কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান ছমিরা নামক ডেলিভারি রোগী। তার বাড়ি রামুর ঈদগড়ে। ভোরে ডাক্তার না পেলেও হাসপাতালে ভর্তি হন। ইতোমধ্যে ডেলিভারির যন্ত্রণা শুরু হয়। ডাক্তার আসার আগেই নার্স আর ধাত্রীর সহায়তায় নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়।
ছাড়পত্রের জন্য ক্যাশ কাউন্টারে গেলে ধরিয়ে দেয়া হয় লম্বা একটা বিল। যেখানে লেখা হয়েছে, হাসপাতালের চার্জ বাবদ ২,২০০ টাকা, ডাক্তারের সাথে ফোনে পরামর্শের ফি ধরা হয়েছে ৯ হাজার টাকা।
ডাক্তার ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির জন্য ডাক্তারের ফোন কলের ফি নেয়া  ৯ হাজার টাকা দেখে হতভম্ব রোগীর স্বজনেরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত বিল ডাক্তারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আর ডাক্তার বলছে, এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমার বিল না। একজন অপরজনকে দুষছেন। দায় নিতে রাজি নয় কেউ।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ অনেক দিনের। এসব জানার পরেও তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই যেন দায় সারছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তারা।
ডাক্তার ছাড়াই স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব করার পরেও কেন এত টাকা ডাক্তারের বিল আসল জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ কোন সদুত্তর দেননি। বরং টাকা না দিলে ছাড়পত্র দিবে না বলে জানায় তারা। এক পর্যায়ে ডাক্তারের সাথে কথা হয়।
জবাবে ডাক্তার বলেন, আমার বিল তো ১ হাজার, ৮ হাজার তো আমার বিল না। আপনারা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন। এরপর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিলে আমাদের কোন হাত নেই এগুলো সম্পূর্ণ ডাক্তারের টাকা। আপনি চাইলে ২ হাজার টাকা কম দিতে পারবেন। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। এইভাবেই কেঁদে কেঁদে বর্ণনা দিলেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিটাল হাসপাতালের ডাক্তার ইফফাত সানিয়া বলেন, আমি ডেলিভারির সময় ছিলাম। তারপরেও আমার ফোন কল হিসেবে এক হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু ৮ হাজার টাকার ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। হয়তো  হাসপাতালের খরচ বাবদ নিয়েছে। এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়।
অতিরিক্ত বিল আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব ইফতেখার বলেন, আমাদের হাসাপাতালের বিল বাবদ ২২০০ টাকা আমরা নিয়েছি। অতিরিক্ত ৮ হাজার বিলটা ডাক্তারের জন্য নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বিলের ব্যাপারে তো ডাক্তার কিছুই জানে বলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আপনাকে হয়তো বলেছে, কিন্তু যদি এই বিলটা না দিই ডাক্তারকে ডিউটিতে যিনি ছিলেন তার বেতন থেকে কেটে নিবে।
বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত বিল হাতানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন