প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী ও স্বজন হত্যার বিচার চাইলেন মাটিরাঙ্গার আনোয়ারা বেগম

fec-image

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে জনৈক চান মিয়ার টিলাভুমি থেকে কাঁঠাল গাছ কাটা ও পরিবহনকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের তিনজনসহ ৫ জন নিহতের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলার পরেও আতঙ্ক কাটেনি। ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও এলাকায় থমথমে অবস্তা বিরাজ করছে।

স্থানীয় গাজীনগর বাজারের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মিথ্যা মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে সাধারণ মানুষ ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। স্বজন হারানোর শোক আর আতঙ্কে দিন কাটছে সেখানকার মানুষের। গেফতার এড়াতে অনেকটা পুরুষশুন্য গাজীনগর।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন রোববার (৮ মার্চ) জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিজিবির বক্তব্য না পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া পুর্ব মুহুর্তে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাশা করেছে গ্রামবাসী ও নিহতদের স্বজনরা। অন্যদিকে প্রতিবেদনের উপর জনগন যেন আস্থাশীল সেই বিষয়ে জোর দিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। অপরদিকে বিজিবি ও গ্রামবাসীর দায়ের করা মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী ও স্বজনদের হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিজিবির গুলিতে নিহত ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মফিজ মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমার বেঁচে থাকা দুই ছেলের জানের নিরাপত্তা নেই।

আমি আমার ছেলেদের নিয়ে আতঙ্কে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই পরিবারের নিরাপত্তাও দাবি করেন আনোয়ারা বেগম। এদিকে মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে মো. মানিক মিয়া এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছে।

বিজিবির হত্যাকাণ্ড ও মিথ্যা মামলা দায়েরের পর জনগনের মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক কাটেনি জানিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. এমরান হোসেন মাটিরাঙ্গার গাজীনগর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ প্রতিবেদন প্রত্যাশা করে বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদন যাতে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে সে প্রত্যাশাও করেন তিনি।

এদিকে বিজিবি ও গ্রামবাসীর দায়ের করা পাল্টাপাল্টি মামলার পর শনিবার (৭ মার্চ) ঘটনাস্থল গাজীনগর পরিদর্শন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাটিরাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহনুর আলম।

এসময় তিনি ঘটনার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। তদন্ত কার্যক্রম শেষ না করে কিছু বলা যাবেনা জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাটিরাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহনুর আলম বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সর্বাত্বক প্রচেষ্ঠা থাকবে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়েছি। ঘটনার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি।

তবে এখনো ঘটনার সময় উপস্থিত বিজিবি সদস্যদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের (বিজিবির) বক্তব্য নিতে না পারায় সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরো তিনদিন সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য গ্রহন শেষে আগামী ১২ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলেও সকলকে আস্বস্ত করেন তদন্ত কমিটির প্রধান ।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) জনৈক চান মিয়ার বাগানের চার টুকরা কাঠাল গাছ পরিবহনকালে মাটিরাঙ্গার গাজিনগরে বিজিবি বাঁধা প্রদান করে। একসময় গাছগুলো বিজিবি নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বিজিবি এলোপাথারী গুলি করে।

এসময় ঘটনাস্থলেও মারা যান মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি মো. সাহাব মিয়া প্রকাশ মুছা মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী।

এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন খান, সাহাব মিয়ার আরেক ছেলে আহাম্মদ আলী, মো. মফিজ মিয়া এবং তার ছেলে মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান সাহাব মিয়ার ছেলে আহাম্মদ আলী ও বিজিবি সদস্য শাওন খান।

এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আহাম্মদ আলীর শ্বশুর মো. মফিজ মিয়া। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মো. মফিজ মিয়ার ছেলে মো. হানিফ মিয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী, বিজিবি, মাটিরাঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন