`বর্তমান বাজেটে আদিবাসীদের কোনো স্থান হয়নি’

10877925_791867974217055_304766390_n

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেছেন, বাঙালিরা যে একটি বহুমাত্রিক জাতি সেটা স্বাধীনতার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও বোঝেনি, এখন আওয়ামী লীগও বোঝে না।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘জাতীয় বাজেট এবং সরকারি সেবাসমূহে আদিবাসীদের জন্য ন্যায্য বরাদ্দ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও একশন এইড বাংলাদেশ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন।

এমএম আকাশ বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দেশের সমতল ভূমির আদিবাসী জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে যতখানি, তার চেয়ে অধিক অত্যাচার, নিপীড়ন, হয়রানি আর দারিদ্র্যের শিকার হয়েছে বংশ পরম্পরায়। পাহাড়ে চলেছে দমন-পীড়ন ও পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ সেনাশাসন।’

তিনি বলেন, ‘জাতিগত বিভাজন নিয়ে আমেরিকা আগে বলতো আমরা বহুমাত্রিক জাতি। এখানে সবাই এসে একটি জাতিতে পরিণত হয়। কিন্তু এখন বলে সালাদ জাতি। এখানে গাজর আর টমেটো আলাদা থাকবে, তবে কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করে নয়।’

‘অথচ আমাদের দেশে বাঙালি জাতি বলা হলেও বিভিন্ন জাতিভেদে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আলাদা রাখা হয়েছে’ যোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।

তিনি সরকারের কাছে আলাদা ভূমি রক্ষা কমিটি, শিক্ষা-বিদ্যুৎ ও ‘আদিবাসী’সহ সকল বিষয়ে কী পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং শিক্ষা ক্যাডারসহ বিভিন্ন ক্যাডারে তাদের নিজেদের নীতিনির্ধারক নিয়োগের দাবি তুলতে পরামর্শ দেন।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌরভ সিকদার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে নানা ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের বাস। এর মধ্যে বাঙালি জাতি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

এছাড়া পাহাড়ে ও সমতলে মিলিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠী। সরকারিভাবে ২৭টি আদিবাসী জাতিকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা ৫০ বা তার বেশি বলে প্রবন্ধে দাবি কা হয়।

সৌরভ সিকদার অভিযোগ করে বলেন, এই সকল ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠী স্বাধীনতাযুদ্ধ, দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতি বিকাশে ভূমিকা রাখলেও এখনো সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘আদিবাসীদের’ আন্দোলনের ফলে সরকার তাদের জন্য আলাদা বাজেট ও মন্ত্রণালয় দিয়েছে। অথচ সমতলের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ‘আদিবাসীদের’ আন্দোলন জোরদার না হওয়ায় এরা পিছিয়ে আছে।

সমতল ও পাহাড়ি ‘আদিবাসীদের’ দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারকে আগে নির্ধারণ করতে হবে আমরা কী? আমাদের কখনো আদিবাসী, আবার কখনো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলা হয়। এই জায়গাটা স্পষ্ঠ করে আমাদের আলাদা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।’

বাংলাদেশ ‘আদিবাসী’ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জঞ্জীব দ্রং এর সভাপতিত্বে গোলটেবিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আদিবাসী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিল মারান্ডি, প্রোগ্রাম-পলিসি অ্যান্ড ক্যাম্পেইন্স এর পরিচালক আসগর আলী সাবরী প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন