বাংলাদেশি জেলে অপহরণ : নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নাফ নদী কিংবা সাগরে বাংলাদেশি জেলেদের একের পর এক অপহরণের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করেছে বিবিসি বাংলা। ৬ সেপ্টেম্বর বিবিসির প্রতিবেদক তাফসীর বাবু তার প্রতিবেদনে বলছেন যে, আরাকান আর্মি সীমান্তের দখল নেওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, বাংলাদেশি জেলেরা এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা এমনটাই বলছেন।
তবে আরাকান আর্মি যে শুধু মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকলে বাধা দিচ্ছে কিংবা আটক করছে তেমনটা নয়। বাংলাদেশি জেলেদের কেউ কেউ দাবি করছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা অতীতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকেও জেলেদের ধরে নিয়ে গেছেন। জেলেদের ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
এদিকে আরাকানের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নাফ নদী কিংবা সাগরে আরাকান আর্মির বিভিন্ন অভিযানের খবর, ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এরকম কিছু ভিডিও এবং ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিড বোটে করে জেলেদের নৌকাকে ধাওয়া করছেন। পরে মিয়ানমারের জলসীমায় অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকা এবং জেলেদের আটকের ছবি এবং ভিডিও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এরকম কয়েকটি ছবি ও ভিডিওতে যেসব জেলেকে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই আবার বাংলাদেশের জেলে বলে শনাক্ত করেছেন স্বজনেরা। যদিও এসব জেলে নৌকা মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশের জলসীমা থেকে আটক হয়েছে, সেটা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
তবে জেলেদের ভাষ্য অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, আরাকান আর্মির তৎপরতার কারণে অনেকে জেলেই এখন নাফ নদীর গভীরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। গত এক মাসে অন্তত: একশত জেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আরাকান আর্মি যে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে সেটা স্পষ্ট। যেটাকে জেলেরা দেখছেন, অনেকটা ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান হিসেবে।
কিন্তু আরাকান আর্মির হঠাৎ এমন ‘আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার’ কারণ কী? নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট এবং স্থানীয়রা এখানে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করছেন। প্রথমটি হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার বিদ্রোহীদের কাছ থেকে আরাকানের দখল নিতে চেষ্টা করছে। সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের জঙ্গি বিমান উড়তে দেখেছেন বলেও দাবি করছেন বাংলাদেশি জেলেরা। সবমিলিয়ে নৌপথে সরকারি বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় নদী ও সাগরে কড়া নজরদারি করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
দ্বিতীয়টি কারণটি হচ্ছে, জেলেদের নৌকা আটকের পর লাখ লাখ টাকার মাছ, জাল, খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দখল।
আর তৃতীয়টি হচ্ছে, জেলেদের আটকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা পরিচালনা এবং এর মাধ্যমে একধরণের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পরোক্ষ চেষ্টা করছে আরাকান আর্মি।
টেকনাফের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এই ধারণা জোরালো হয়েছে। যদিও এসব বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। কোস্টগার্ড দাবি করছে, বাংলাদেশের জলসীমার ভেতর থেকে জেলেদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে না। কারণ জেলেদের নিরাপদে মাছ ধরা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ডের জোরদার নিরাপত্তা কার্যক্রম রয়েছে।
তবে কারণ যেটাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশি জেলেরা একের পর এক আটক হচ্ছেন এবং একশত জেলে আটক হওয়ার পর তাদের খোঁজ কিংবা ফেরত আনাও যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ জানতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য চাওয়া হলেও কোনও সাড়া পায়নি বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ‘তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, রাখাইনে নির্দিষ্ট বৈধ কোন সরকারের অস্তিত্ব না থাকায় জেলেদের ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ হতে পারে।’


















