বাজেটে ‘আদিবাসীদের’ জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

Photo copy

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

সমতলের ‘আদিবাসীদের’ উপর চলমান নির্যাতন ও ভূমি দখলের প্রতিবাদে এবং বাজেটে ‘আদিবাসীদের’ জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে’ রোববার সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও কাপেং ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সংগঠন দুটির মিডিয়ায় পাঠনো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ; বর্ষিয়ান রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমূখ।

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আজকে জানতে পারলাম যে আদিবাসীদের বিষয়ে একটু নরমভাবে কথা বলার জন্য নাকি সরকারের প্রতিনিধিরা অনুরোধ করেছেন। তাহলে একজন আদিবাসী নারী ধর্ষিত হলে কি বলতে হবে ‘কত নারীইতো ধর্ষণের শিকার হয়, আমাদের এক আদিবাসী নারী আজ ধর্ষনের শিকার হয়েছে। একইভাবে কি বলতে হবে আজ ভূমিদস্যুরা অমুক জায়গার আদিবাসীদের জায়গা জমি কেড়ে নিয়েছে। তিনি এ সময় সরকারকে দৃষ্টিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, চারদিকে এতো অন্যায় অত্যাচার তা কি সরকারের চোখে পড়বেনা। নিশ্চয় সরকার দৃষ্টিহীন হয়ে গেছে।’

বাজেটে বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি অর্থমন্ত্রী যদি সামান্য টাকা বলেন তাহলে আদিবাসীদের জন্য গত বছরে বরাদ্দকৃত ২০ কোটি টাকাতো সামান্যের চাইতেও সামান্য টাকা। তাই আমি অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য আদিবাসীদের জন্য সামান্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হোক’।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আদিবাসীদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার কারা করছে তা কিন্তু আমরা জানি। এমনকি প্রভাবশালী দলের নেতারাও কিন্তু অনেক সময় ভূমিদস্যুদের ও নির্যাতনকারীদের সহায়তা করছে। গোপনে মধুপুরে আদিাবসীদের জায়গায় সরকার যে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করেছে সেটা অন্যায়। এর আগেও সেখানে রক্তপাত হয়েছে। এটি নিয়ে নিশ্চয় সরকারের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তারপরেও আবারো সরকার এ কাজ কিভাবে করছে সেটি আমার বোধগম্য নয়’।

ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘নাইক্ষ্যংছড়িতে যে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটলো তার পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন নিজেদের লোকজনরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে’। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু হিসেবে নয় নাস্তিক হিসেবে নাকি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শাস্তি দিয়েছেন বলে সেখানকার সাংসদ বলছেন। আসলে এভাবেই এদেশের সংখ্যালঘু ও আদিবাসী মানুষদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন চলছে, শিক্ষকদের প্রতি অত্যাচার চলছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি এমনকি কিছু কিছু সাংসদরাও এতে যোগ দিয়েছে’। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধসহ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাই।

তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তানের ভিতরে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের প্রতি যে ধরনের নির্যাতন চলছে ঠিক সেরূপ নির্যাতন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের প্রতি করা হচ্ছে এবং আমাদের সমাজে, সাংস্কৃতিক অঙ্গণে, রাজনৈতিক অঙ্গণেও এরূপ বিরূপ সংস্কৃতির চর্চা চলছে। যার কারণে প্রশাসনও সেইরূপ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছেনা। তিনি এই আগামী অর্থবছরে সমতলের আদিবাসীদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানান’।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘আজকে সংবাদ সম্মেলনের যে সব কথা বলা হয়েছে সেগুলো নতুন কোন কথা নয়। আদিবাসীদের উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপীড়ন, ভূমি দখল, আদিবাসী নারী ধর্ষণ এগুলো ঘটতেই আছে। আজকের মূল বক্তব্যে অনেক দোষী ব্যক্তিদের নামও বলা আছে। তারপরেও যদি প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তা সত্যিই দুঃখজনক’।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন,‘ সাম্প্রতিক সময়ে সমতলসহ পাহাড়ের আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, উচ্ছেদ, মারপিট, হত্যাসহ আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ এর মতো ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটে যাচ্ছে। এ কারণে আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছে এবং অনেকেই ভয়ে এ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চিন্তাভাব না করছে। ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে আদিবাসীরা অনেকেই দেশত্যাগ করেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০১৪ নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের উপর ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসানের’ (২২.১ ধারা) অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে সেটি হচ্ছে না’।

তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আগামী বাজেটে অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে যেন আদিবাসীদের জন্য ন্যায় সঙ্গত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করা হয় এবং বাজেট বক্তৃতায় আদিবাসীদের জন্য আলাদা একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়’।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন