উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

বান্দরবানে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ালেন আ.লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী

fec-image

আর কয়েকদিন পর ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। কিন্তু বান্দরবান সদর উপজেলার পরিষদ নির্বাচনের অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলার চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে নির্বাচন প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন।

তিনি বর্তমানে সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এবারের উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হিসেবে আনারস মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের অংশ নিয়েছেন। এদিকে তার নির্বাচনের পোস্ট বিভিন্ন স্থানে গ্রাম-গঞ্জে ও শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার বাসভবন সংলগ্ন হোটেল প্লাজা কনফারেন্স কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে তিনি মতবিনিময় সভা করেছিলেন। সভায় তিনি বলেন, নির্বাচনে আমাকে প্রাণ নাশের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমার সমর্থনে যারা কাজ করছে তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি ৬টি ইউনিয়নে আমি কাজ করতে পারছি না। ফলে আমার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো কথা বলেছেন তিনি।

এদিকে উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মোটরসাইকেল প্রতীক প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি গত নির্বাচনের আগে টানা ৪ বারের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নির্বাচন অফিস দেওয়া তথ্য মতে, আগামী ৮ মে বান্দরবান সদর ছাড়াও আলীকদম উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদর উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা রয়েছে ৭১ হাজার ৪শত ৪৪জন। তার মধ্যে মহিলা ৩৩ হাজার ৮শত ৭৪ ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫শত ৭০ জন। এছাড়াও স্থায়ী ভোট কেন্দ্র ৪৫টি সহ মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা রয়েছে ১শত ৬৯। তবে একই তারিখে রোয়াংছড়ি ও থানছি উপজেলার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কুকি চিন ইস্যুতে এই ২ উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছেন নির্বাচন কমিশন।

এদিকে আজ সকালে নিজের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বার্তা লাইভে এসে বলেছেন, তাঁর সমর্থকদের হুমকি ও নির্বাচনে কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করায় এবং দলীয়ভাবে কোন সমর্থক না পাওয়া আপাতত নির্বাচন প্রচার-প্রচারণা স্থগিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই নিয়ে সাধারণ জনমনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, পারিপার্শ্বিক দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান চাপে আমি মানসিকভাবে দিশেহারা। কখন কি ঘটে যায়, এটি অনুমান করা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত যেভাবে আমাকে এবং আমার কর্মী সমর্থকদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের আদর্শ কর্মী হিসেবে আমার জন্য জনগণের ক্ষয়ক্ষতি, কারো জীবন বিনাশ হোক এই শঙ্কাকে সামনে রেখে এমন নির্বাচন আমার দরকার নেই।

তিনি আরও বলেন, সার্বিক বিবেচনায় বান্দরবানে সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে আমি যাতে প্রচার প্রচারণা না করি, আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে অন্যান্য কর্নার থেকে বলা হচ্ছে।

নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমার প্রতিপক্ষ তিনি বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি মাননীয় সংসদের সমর্থিত এই পরিচয়ে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলার কতিপয় নেতাসহ যারা ইউপি চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকেও ব্যবহার করে আমাকে ঠেকাও এই পদ্ধতিতে তারা কাজ করছেন। এই বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এটি যদি হয়, ৭ম বারে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ আমার প্রিয় নেতা বীর বাহাদুর তিনি যদি ভেবে থাকেন, তাহলে আমার মতে এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো শ্রেয়।

দলীয় নেতাদের ক্ষোভ টেনে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে একক প্রার্থী আমি। এটি অস্পষ্ট করার পরও নেতাকর্মীদের নিষেধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে নির্বাচনী মাঠে আমার সাথে কাজ না করার জন্য। সারাদেশের ন্যায় ৮মে বান্দরবানে ৪টি উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে, তারমধ্যে বিভিন্ন কারণে ৩টি উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে ৩টি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী টিম করে তাদের প্রচার প্রচারণায় কর্মরত আছেন। যা প্রতিনিয়ত ফেসবুকে আপলোড হচ্ছে, আমার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যেহেতু দলীয়ভাবে কোন সাড়া না পাওয়ায় এই নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সবশেষে তিনি বলেন, শক্ত অবস্থান থেকে আমি আমার কথাগুলি ব্যর্থহীন ভাবে সকলের উদ্দেশ্যে জানানোর জন্য বলছি। কারণ অনেকগুলো বিষয় আছে, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। বিশ্লেষণ হবে পরে, রক্ষা করবো মাঠে আমার সমর্থন নেতাকর্মীদের। এই বাস্তবতায় এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীরা তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে যারা বিএনপির প্রার্থীদের সাপোর্ট দিচ্ছে, তারা আসলেই দলীয় কর্মী নয়। আমি মৃত্যু আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আদর্শ সৈনিক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্মী হিসেবে থাকবো এই দৃঢ় ব্যক্ত প্রত্যয় করছি।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ বলেন, নির্বাচনী মাঠে জনসমর্থন না পেয়ে প্রচার প্রচারণা থেকে বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী একে এম জাহাঙ্গীর।

প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ালে দলের কোন প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও এতে দলের কোন প্রভাব পড়বে না। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, একে এম জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বিষয়ে ব্যাপারে দলের কাউকে জানাননি। আর দলীয়ভাবে প্রার্থীর হিসেবে রিজুলেশনে স্বীকৃতি দিয়েছি। এখন সে দাঁড়াবে কিনা থাকবে কিনা সে ব্যাপারে আমাদের কাছে খবর আসেনি।

দলের সমর্থন না দেওয়ার প্রসঙ্গে আব্দুর রহিম চোধুরী বলেন, তিনি যদি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সম্পৃক্ত না থাকে আর সবার সঙ্গে যদি আলোচনা না করে নিজেই একা একা কাজ করে তাহলে দলের পক্ষ থেকে গায়ে পড়ে কাজ করার সুযোগ নেই। তারপরও দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যা যা করার প্রয়োজন সেটি আমরা করব বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন