বান্দরবানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসব

image_153138_0

নিজস্ব প্রতিনিধি :

বান্দরবানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসব। মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাইং এর অন্যতম আকর্ষণই হলো তরুণ-তরুণীদের পানি খেলা। এই উৎসব এখন শুধু মারমারাই নয় বাঙ্গালীরাও মেতে উঠেছে এবার পানি খেলায়। সঙ্গে বিদেশী পর্যটকতো রয়েছেই।

সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির এই মিলন মেলার দেখা মেলে বান্দরবানে। বর্ষবরণ সাংগ্রাইং উৎসবে শহরের রাজার মাঠের একদিকে চলছে তরুণ-তরুণীদের মৈত্রী পানি বর্ষণ আর অন্যদিকে মঞ্চে চলছে সাংগ্রাই এর ঐাতিহ্যবাহী গান সাংগ্রাইয়ে মা ঞি ঞি ঞায়া রিকযাই গে পা মে“ অর্থাৎ সাংগ্রাই এর উৎসবে চলো আমরা পানি খেলতে যাই।

শহরের রাজার মাঠে শুক্রবার বিকেলে যখন জলকেলি উৎসব শুরু হয় তখন সবার মুখে মুখে ফিরছিল মার্মা গানের এই সুরলহরী। বান্দরবানে মার্মা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের অন্যতম আয়োজন জলকেলি বা পানি খেলা শুরু হয়েছে। উৎসব উপলক্ষে রাজার মাঠে ছিল বিশাল আয়োজন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দড়ি টানা প্রতিযোগিতা, শিশুদের খেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহন আর ছিল ঐহিত্যবাহী পানি খেলা।

নেচে গেয়ে আনন্দ উৎসবে নানা রংগের পোষাক পরে সাংগ্রাই পালন করে মার্মা সম্প্রদায়। উৎসবে শুধু মার্মারাই নয় নানা সম্প্রদায়ের লোকজনও অংশ নেয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য জায়গা বান্দরবান। প্রতিটি উৎসবেই নানা সম্প্রদায়ের লোকজন একত্রিত ভাবে অংশ নিয়ে উৎসব উদযাপন করে। এবারও সাংগ্রাই উৎসবে এই সম্প্রীতির কোন কমতি ছিলনা। বিকেলে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পানি ঢেলে সাংগ্রাই এর জলকেলি উৎসবের সূচনা করেন। এ সময় তার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি পত্নি মেহ্লা প্রু, পৌর মেয়র মো: ইসলাম বেবী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শুধু তরুণ-তরুণীরাই নয় আবাল-বৃদ্ধা-বনিতাসহ সকলেই পানি খেলায় অংশ নেয়। মার্মাদের বিশ্বাস স্বচ্ছ পানির ধারা ধুয়ে মুছে দিবে পুরনো বছরের যত দু:খ গ্লানী বেদনা। আর বরণ করে নেয়া হবে নতুন বছরকে। এই বিশ্বাসেই একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দেয়া হয় বর্ষবরণে। এবার শহরের মূল রাজার মাঠে অনুষ্ঠান হওয়ায় উৎসব হয়ে উঠে আরো আনন্দময় ও বর্ণিল। পাহাড়ী বাঙ্গালী বিদেশী সবাই একসাথে উৎসব উদযাপন করে রঙ্গিন ভাবে। গতকাল সকাল থেকেই ছিল উৎসবের নানা আয়োজন। বৌদ্ধ মন্দিরে ভিক্ষুদের জন্য নানা প্রকাকের উৎকৃষ্ট খাবার (ছোয়াইং) উৎসর্গ করা হয়। এর আগে বিকেলে উজানী পাড়া সাংঙবগু নদীর ঘাটে বৌদ্ধ মূতী স্নান উৎসবের আয়োজন করা হয়। চন্দনের পানেতে বৌদ্ধ মূর্তী ধুয়ে সেই পবিত্র পানি পান করে ধর্মপ্রাণ নর নারীরা। রাতে পাড়ায় পাড়ায় চলে পিঠা তৈরীর আয়োজনসহ আরো অনেক কিছু।

পহেলা বৈশাখ থেকে এই উৎসব শুরু হলেও চলবে আরো দুইদিন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন