‘বিদেশের মাটিতে উড়াতে চাই বিজয়ের পতাকা’

fec-image

‘ছোটবেলা থেকে’ই ফুটবল পছন্দ করি। পাড়ায় ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলতাম। এই দেখে বাবার ইচ্ছায় ১০ বছর বয়সে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রশিক্ষণে ভর্তি করানো হয়। যদিও মা’ বারাবরই ফুটবল অপছন্দ করেন। বঙ্গমাতা ফুটবল প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলার সুযোগ হয়েছে। আজ আমি দেশের বাইরে ফুটবল প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। এর জন্য ফুটবল কোচ থেকে শুরু করে সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার ইচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে বিদেশের মাটিতে বিজয়ের পতাকা উড়ানো।’ এসব কথা বলছিল কক্সবাজারের নারী ফুটবলার নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৬)। সে চায়না ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৪ এ অংশগ্রহণে সুযোগ পেয়ে চিন যাচ্ছে। সুমাইয়া আক্তার মহেশখালী কালারমার ছড়ার ছৈয়দ আলমের মেয়ে।

কক্সবাজারের আরেক নারী ফুটবলার সামিয়া আক্তার’ও (১৭) সুযোগ পেয়েছে চায়না ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৪ এ। সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সামিয়া আক্তার বলে,‘আমার বাবা নেই। মায়ের ইচ্ছায় ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়েছি। শুরুর দিকে লোকমুখে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। মেয়ে কেমনে ছেলেদের মত ফুটবল খেলে আরও কত কি। আমাকে মা’ ছাড়া তেমন কেউ উৎসাহ দেয়নি। খেলার জন্য আজ আমি বিদেশ যাচ্ছি এই খবরে মা’ অনেক খুশি। জীবনে বড় স্বপ্ন হল জাতীয় দলে খেলা। দেশবিদেশে সুনাম অর্জন করা। আজকে এই পর্যন্ত আসার পিছনে অবদান রয়েছে ফুটবল কোচ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন স্যার এবং কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি অনুপ অপুসহ আরও অনেকে’র। এই প্রথম দেশের বাহিরে খেলতে যাচ্ছি এর চেয়ে বড় আনন্দ কি হতে পারে। ভয় আর চ্যালেঞ্জ দুইটাই একসাথে কাজ করছে।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের সুমাইয়া আক্তার ও সামিয়া আক্তার সুযোগ পেয়েছে চাইনা ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৪’ এ। ইন্টারন্যাশনাল স্কুল স্পোর্টস ফেডারেশন (আইএসএফ) এর উদ্যোগে বাংলাদেশ স্কুল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮’তে সারা দেশ থেকে ১৮ জন অংশগ্রহণের মধ্যে তারা দুইজন।

চায়না’য় অংশগ্রহণের জন্য গত শুক্রবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সুমাইয়া-সামিয়া। প্রথমে তারা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) অনুশীলন করবে। পরে আগামী ১৭ মে থেকে ২৭ মে’ পর্যন্ত চাইনা ডালিয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৪ এ অংশগ্রহণ করবে। চায়না’য় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করবে।

কক্সবাজার ফুটবল কোচ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, সুমাইয়া-সামিয়া দুই’জনই ভাল খেলে। তারা সারা দেশে ১৮ জনের মধ্যে কক্সবাজার থেকে এই ২ জন সুযোগ পেয়েছে। চিন যাওয়ার আগে বিকেএসপি’তে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা চায়নায় প্রশিক্ষণের সাথে টুর্নামেন্টে খেলবে।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি অনুপ বড়–য়া অপু জানান, সময়ের সাথে খেলাধুলার ক্ষেত্রে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে ভাল করছে নারীরা। একজন ভাল খেলোয়াড় তৈরির জন্য কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তৃণমূল থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের। চায়না যাওয়ার সুযোগ পাওয়া সুমাইয়া এবং সামিয়ার জন্য শুভ কামনা রইল। সকলের প্রত্যাশা তারা যেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশবিদেশে সুনাম অর্জন করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন