ভূরাজনীতি ও আফগান পরিস্থিতিতে গুরুত্ব হারাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট

fec-image

রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব হারাতে শুরু করেছে। ফলে শিগগির এই সংকট সমাধানের সম্ভাবনা নেই। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে ভূরাজনীতি ও আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার প্রেক্ষাপটে এমনটি হয়েছে। এখন এই সমস্যা সমাধানের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে মঙ্গলবার এক গবেষণাগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ও প্রথমা প্রকাশন যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী-জীবন: অনিশ্চিত আগামী ও সভ্যতার দায়’ শিরোনামের গবেষণাগ্রন্থটি।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানরত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এক তরুণ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আহতারামের কবিতাপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দীন সিপিএসের কর্মকাণ্ড সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন। এরপর ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী-জীবন: অনিশ্চিত আগামী ও সভ্যতার দায়’ বইটির দুই সম্পাদক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী ও সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাকিয়া সুলতানা বইটি নিয়ে আলোচনা করেন।

অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ এবং রামরুর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সিআর আবরার বলেন, বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট পাঁচ বছরে এসে পড়েছে। ফলে তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা কমতে শুরু করেছে। বিশ্বশান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের দায়িত্ব রয়েছে। অথচ তারা কীভাবে ক্ষুদ্র স্বার্থ দ্বারা চালিত হয়ে নিজেদের বাণিজ্য ও কৌশলগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে, সেটি রোহিঙ্গা সংকটে প্রমাণিত হয়েছে।

সিআর আবরার আরও বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে রোহিঙ্গাদের মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে না দিলে তা শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়াবে। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে যখন এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই আমাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ এবং রামরুর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সিআর আবরার অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ এবং রামরুর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সিআর আবরারছবি: সংগৃহীত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখতে পাই। ক্ষুদ্র জাতীয় স্বার্থের কাছে উপেক্ষিত মানবিক মূল্যবোধ। সেটি আমরা মিয়ানমার, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পাই। আফগান ও রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এভাবে তো চিরকাল চলতে পারে না।’

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের ফেলো মো. শহীদুল হক বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বড় অংশীদারদের কারণে রোহিঙ্গা সংকট পেছনে পড়ে যাচ্ছে। এতে শুধু তহবিল নয়, মনোযোগও কমতে থাকবে। তাই সংকট সমাধানে নতুন করে ভাবতে হবে। এ জন্য নাগরিক সমাজের স্তর থেকেও উদ্যোগ নিতে হবে।

শহীদুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়েও কথা বলতে হবে। যেন তাঁরা সেখানকার লোকজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে, তা না হলে মনে হবে, সমস্যাটা শুধু বাংলাদেশের ভেতরের।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট ২০১৭ সাল থেকে ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য আমাদের সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের জন্য বিরাট সংকট তৈরি করেছে। আবার এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে, সেটিও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আফগান সংকটের পর এই সংকটের বিষয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কতটা আকর্ষণ করতে পারব, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, ‘এ দেশে গবেষণা কমে যাচ্ছে। অথচ বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং তা প্রকাশিতও হচ্ছে। তাই আমরা বাংলাদেশে বসে গবেষণা করা এবং তা প্রকাশ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করি। সেটা বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক টাটা জাফরের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রথমা প্রকাশনের সমন্বয়ক অরুণ বসু ও প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন