ভ্রাম্যমান আদালতের হুমকী দিয়ে সমুদ্র সৈকতে চলছে বীচ কর্মীদের অপকর্ম
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বরত বীচ কর্মীরা পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদান, সহযোগিতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু বীচ কর্মী নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে জড়িয়ে পড়ছে দূর্নীতিতে। তারা বিভিন্ন কিটকট ব্যবসায়ীসহ ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে আদায় করছে চাঁদা। দাবিকৃত চাঁদা আদায়ে ভয় দেখাচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এদিকে প্রশাসন বলছে, ভ্রাম্যমান আদালতের নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, কিছু অসাধু বীচ কর্মী ইচ্ছেমত চাঁদা আদায় করছে কিটকট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা বাদাম, চা-কফি, চিস্প, ঝালমুড়ি ও পানি বিক্রেতারা। সমুদ্রের পাড়ে এসব বিক্রি অবৈধ হওয়ায় অসাধু বীচ কর্মীরা ভ্রাম্যমান আদালতে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করছে টাকা।
শুধু তাই নয় এসব বীচ কর্মীরা প্রশাসনের লোকজনের মত চেক করছে কিটকট ব্যবসায়ীদের কার্ড (অনুমোদনের লাইসেন্স)। দেখছে কার্ডের মেয়াদ আছে কি না। আর দুর্বল জায়গা খতিয়ে ঠেকায় ফেলে আদায় করছে চাঁদা। আবার অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা ঝিনুক ব্যবসার অনুমোদন নিয়ে বিক্রি করছে ভিন্ন পন্য। আর এই সুযোগটাকেও কাজে লাগাচ্ছে অসাধু বীচ কর্মীরা। তাদের চাঁদা না দিলে ভয় দেখাচ্ছে ভ্রাম্যমানা আদালতের। তারা বলছে ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে জেল-জরিমানা করিয়ে দেবে।
ভ্রাম্যমান আদালতের ভয় দেখানোর কারন জানতে চাইলে ভূক্তভোগীরা জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানে ভ্রাম্যমান আদালনত যখন বীচ এলাকায় অভিযান চালান তখন বীচ কর্মীরা সাথে থাকেন। অনেক সময় বীচ কর্মীরা অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করে। তারা দেখিয়ে দেয় কোন দোকান অবৈধ এবং অপকর্ম কোথায় চলছে। ভ্রাম্যমান আদালত নির্দিষ্ট নিয়মে চললেও কিছু অসাধু বীচ কর্মী এটাকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। অভিযান শেষে আদালত চলে গেলে তারা বলছে অভিযানে তাদের ক্ষমতা ও ভূমিকা ছিল। তারা চাইলে যে কাউকে জেল-জরিমানা করাতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেছেন, তাদের পোষাক দেখতে অনেকটা পুলিশের মত। কিছু বীচ কর্মীর ভাব-সাব যেন অন্যরকম। তারা অনেক সময় পুলিশের মত আচরণও করে। তারা ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫’শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেয়।
প্রমান হিসেবে তিনি আরো বলেন, এক বীচ কর্মী ‘আল্লাহন দান’ নামে একটি রেস্টুরেন্টে বাকীতে খাবার খেত। পরে রেস্টুরেন্ট মালিক বাকী দিতে রাজী নন। এদিকে কয়েকদিন পরেই ওই রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় রেস্টুরেন্ট মালিককে ৩ দিনের জেল দেয়া হয়। ভ্রাম্যমান আদালত নিজস্ব গতিতে অপরাধীকে শাস্তি দিলেও বাকী খাওয়া বীচ কর্মী বিষয়টিকে প্রতিশোধ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
এ ব্যাপারে নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ ভ্রাম্যমান আদালতের নাম বিক্রি করছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। যদি কেউ আদালত নিয়ে এই ধরনের অপকর্ম করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ভ্রাম্যামান আদালত নিজস্ব গতিতে চলে।
কক্সবাজার টুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুরিশ সুপার রায়হান কাজেমী জানান, কিছু বীচ কর্মী অপকর্ম করার বিষয়টি শুনেছেন। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিতও করেছেন। তবে প্রমানসহ কাউকে ধরতে পারলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।