কেএনএফের হামলা

‘মনে করেছিলাম জীবনের শেষ দিন’

fec-image

‘অস্ত্রধারী ২০ থেকে ২৫ জন মসজিদে ঢুকে পড়েন। তখন আমরা সবাই এশার নামাজে ছিলাম। ফরজ নামাজ শেষ করে দেখলাম, সবার মুঠোফোন নিয়ে নিচ্ছিলেন অস্ত্রধারীরা। পাশাপাশি মসজিদে আসা মুসল্লিদের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কে, তা জানতে চান তাঁরা। পরে ব্যবস্থাপক নিজামুদ্দিনকে নিয়ে ব্যাংকে যান কিছু অস্ত্রধারী। আর বাকিরা মসজিদে অবস্থান নেন। মসজিদে উপস্থিত ২০ জন মুসল্লির দিকে অস্ত্র তাক করে থাকেন তাঁরা। এ সময় মুসল্লিরা সবাই মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে নিয়ে অস্ত্রধারীরা চলে যান। এরপর মুসল্লিরা মাথা ওপরে তোলেন।’

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির পাশাপাশি ব্যাংকের পাশে অবস্থিত মসজিদের মুসল্লিদেরও কিছু সময়ের জন্য জিম্মি করে রাখেন নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা। সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবারই কেঁপে উঠছিলেন ওই মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবাই মনে করেছিলাম জীবনের শেষ দিন। অনেকে তওবা পড়ে নেন।’

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মসজিদের খতমে তারাবির হাফেজ মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘কান্না করার মতো অবস্থাও ছিল না। কাউকে টুঁ শব্দ করতে দেয়নি অস্ত্রধারীরা। যতক্ষণ তারা মসজিদে ছিল, সবাই মাথা নিচু করেছিলেন। বেঁচে আছি, এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’

রুমায় কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা গতকাল মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিক থেকে ঘণ্টাখানেক সময় ধরে সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করেন।

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, কেএনএফের সদস্যরা দুটি এসএমজি (লাইট মেশিন গান) ও ৬০টি গুলি,৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি, ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ এবং সোনালী ব্যাংকের শাখার দুটি ভল্টের একটি ভেঙে রক্ষিত টাকা নিয়ে গেছে। টাকার পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

অবশ্য সোনালী ব্যাংক বান্দরবান অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ ওসমান গণি গত রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, রুমা শাখায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকার কথা।

জানতে চাইলে বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, একদল দুর্বৃত্ত ব্যাংকের ভল্টে হামলা চালিয়েছে। তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুট করে নিয়ে নেয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে।

বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে তাদের ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়।

 

সূত্র: প্রথমআলো

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কেএনএফ, বান্দরবান, ব্যাংক ডাকাতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন